কক্সবাজারের উখিয়ায় অবৈধ গায়েবি ডাম্পারের ছড়াছড়ি লক্ষ করা যাচ্ছে৷ এসব ডাম্পার বিভিন্ন চোরাকারবারি কাজে, অবৈধ ইটভাটা, পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বালু উত্তোলন এবং বনের গাছ পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে মাসিক মাসোয়ারায় চলছে এসব অবৈধ ডাম্পার৷ এর ফলে অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গতির ডাম্পারের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে নিয়মিত প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
- নষ্ট করছে সড়ক
- ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়
- হারিয়ে যাচ্ছে বনের কাট
- বাড়ছে চোরাচালান পাচার
- অবৈধ ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে ডাম্পার
গত ১৪ জানুয়ারি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডাম্পারের ধাক্কায় রাবেয়া আক্তার (২২) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ এর বেশি অবৈধ ডাম্পার উখিয়ার ইটভাটা গুলোতে মাটি ও কাঠ বোঝাই, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালামাল পরিবহণ, ধানী জমির টপ সয়েলসহ বন ও পাহাড় কেটে পরিবেশ ধংস করছে। প্রতিটি গাড়িতে ভুয়া নাম্বার ব্যবহার করছে৷ প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট এব ডাম্পার গুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন৷ চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় থামানো যাচ্ছে না পরিবেশ ধংসের মহাযজ্ঞ।
বনবিভাগ সূত্রে জানাজায়, গত দুই মাসে ছয়টি ডাম্পার গাড়িকে বালু ও পাহাড় কাটার অপরাধ মামলা দিয়েছি। যার মামলা পিওআর নং- ০৭/থাইং ৫৬/ উখি অব ২০২৪-২৫, ইউডিওআর নং- ০৬/থাইং ৫২/ উখি অব ২০২৪-২৫, পিওআর নং- ৫০/ উখি অব ২০২৪-২৫, পিওআর নং- ০৫/থাইং ৪৫/ উখি অব ২০২৪-২৫, ইউডিওআর নং- ৬৬/ উখি ১৭/উসবি অব ২০২৩-২৪, পিওআর নং- ৪৫/উখি ০৫/থাইং অব ২০২৪-২৫।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) উখিয়া উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম আজাদ জানান, মাটি বালু পাচার, বনের কাট, অবৈধ ইটভাটা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালামাল বন করা, সীমান্তে চোরাই কাজে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ ডাম্পার গাড়ি৷ এসব অবৈধ গাড়ি ব্যবহারের ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ৷ এভাবে চলতে থাকলে এখানকার জীব বৈচিত্র্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানান, পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে উপজেলা তথা সর্বস্ততের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ কেউ যদি অনৈতিক কাজ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
থাইংখালী বিট কর্মকর্তা বিকাশ দাশ জানান, পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকায় পাহাড় ও অবৈধ বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত অবৈধ ডাম্পার গাড়ি চলাচল সম্পুর্ন বন্ধ আছে৷ অন্য জায়গায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আমার দেখার বিষয় নই৷ তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এসব অবৈধ ডাম্পার গাড়ি মাটি কাটার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি বন্ধ করেছি৷ এসব বন্ধ করাতে হুমকির মুখে আছি৷ তাই এমন অনৈতিক কাজে আরও বন্ধ করতে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মী এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই৷
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, আমি এই উপজেলা নতুন তবে নতুন হলেও আমি বসে নেই৷ যোগদান করার পর থেকে অনেকগুলো অবৈধ ডাম্পার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি৷ বালু উত্তোলন বন্ধ করেছি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি৷ যদি আপনার কাছে স্পেসিফিক তথ্য থাকে তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো৷ আমি এবং আমার টিম চাই পুনরায় জৈববৈচিত্র ফিরিয়ে আনতে৷ বন্ধ করতে চাই সমস্ত অবৈধ কর্যকলাপ৷
উখিয়া শাহপুরী হাইওয়ে থানার কর্মকর্তা মাহবুল কবির জানান, আমরা অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। যদি আমাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির করে তাহলে তাদের নামে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব৷ আজকে ৫টি গাড়ির মামলা দিয়েছি৷ শুধু ডাম্পার গাড়ি নই যেকোনো অবৈধ ও নাম্বার বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে৷
পাঠকের মতামত: