কক্সবাজার, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে

উখিয়ায় অবৈধ স’মিলে লেখাপড়া ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক::

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় কোন বৈধ কোন লাইসেন্স ছাড়াই স-মিল বসিয়ে অবাধে বনের চেরাই করে গিলে খাচ্ছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। সরকারি বনবিভাগের আইন অমান্য করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেষেই অবাধে গড়ে উঠা এসব স’মিলে সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলজসহ নানা প্রজাতির গাছ। এতে পরিবেশের বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই দ্রুত এদের আইনের আওতায় আনার দাবি স্থানীয়দের৷ অন্যতায় উপজেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০টি অবৈধ স’মিল বসিয়ে অবাধে বনের গাছ ধ্বংস করছে৷ যার মধ্যে রাজাপালং ৬টি, রত্নাপালং ৭টি, হলদিয়াপালং ৭টি, জালিয়াপালং ৭টি ও পালংখালী ৮টি অবৈধ স’মিল দিনরাত চলছে৷ এসব দেখেও দেখছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর৷

সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া জমতলি, দৌছড়ি, ফলিয়াপাড়া, দরগাহ বিল, রুপপতি, সোনাইছড়ি, হলদিয়া গুয়ালিয়া, পাগলিরবিল, টিএনটি পালংখালীর পশ্চিম পাড়া, তেলখুলা সহ অনেক বনাঞ্চলের বন উজাড় করা হয়েছে৷ বিশেষ করে জামতলি এলাকায় রাত হলে অনেকবছর পুরনো গর্জন গাছ কেটে নিয়ে যায় একটি সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ‘মাসোহারা’ দিয়ে এসব করাতকল পরিচালনা করা হচ্ছে। না হয় প্রশাসন ও বনবিভাগের নাকের ডগায় কীভাবে এসব অবৈধ করাতকল বা স’মিল চলছে প্রশ্ন। এসব স’মিল বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবী৷

করাতকল বিধিমালা-২০১২ তে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না কোথাও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, রাজাপালং ফাজিল মাদ্রাসা, রাজাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজাপালং বালিকা দাখিল মাদ্রাসা৷ এই ৩টি প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে ২টি অবৈধ স’মিল বসিয়ে অবাধে বনের গাছ কাটছে৷ এই স’মিলের আওয়াজের ফলে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।

রত্নাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, রত্নাপালং উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝখানে ১টি সমিল বসিয়ে দিনরাত বনের গাঋ ধ্বংস করা হচ্ছে৷ এই করাতকলটি কারণে ক্লাস করা সম্ভব না৷ কারণ এটি এতো আওয়াজ করে যে ক্লাসে প্রবেশ করার মতো না৷ তাই এই অবৈধ করাতকল সরানো না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবো৷

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান জানান, অবৈধভাবে যেসব স’মিল পরিচালনা করছে বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বনের পাশে সেসব করাতকল বা স’মিল উচ্ছেদ করা না গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে৷

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান জানান, আমি যোগদান করার পরপরই কোট বাজার এলাকা থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ এবং বনবিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে ২টি স’মিল উচ্ছেদ করেছি৷ আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে৷ এই রেঞ্জে কোন অবৈধ স’মিল বা করাতকল থাকতে পারবে না৷

উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারিন তাসনিম তাসিন জানান, উপজেলা প্রশাসন পুলিশ-বন বিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে স’মিল, বালুর মেশিন ও বালু জব্দ করা হয়েছে৷ পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অভ্যহত আছে৷ যেসব অবৈধ স’মিল এখনো চলছে ধারাবাহিকভাবে সবগুলো সমিলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে৷

পাঠকের মতামত: