কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

উখিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪ ‘শ, মৃত্যু ৩

উখিয়া বার্তা অনলাইন ডেস্ক :
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সংলগ্ন এলাকার লোকজনের মাঝে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সংলগ্ন এলাকার নালা- নর্দমা, ছরা,খাল ও পরিত্যক্ত স্থানে চলমান ও জমে থাকা পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা দেখা গেছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত  উখিয়ায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৭৭ জন। এরমধ্যে মারা গেছে ৩ জন।

উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু জীবাণু পরীক্ষা ও আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। উখিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর সেবাকর্মী, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ সদস্যসহ আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার স্হানীয় বাসিন্দা বলে উখিয়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী মেগা ক্যাম্পের পাশাপাশি ১৭ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এসব ক্যাম্পের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস প্রায় ৯ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার। সেখানে দুর্গন্ধ আর মশা- মাছির অত্যাচারে দিবারাত্রি বসে বা দাঁড়িয়ে দুদণ্ড কথা বলারও উপায় নেই। এর সাথে রয়েছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন, গোসল ও ল্যাট্রিনের স্থানগুলো নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না রাখার কারণে, যত্রতত্র পানি ও ময়লা জমে থাকে।
অনেক দেশী-বিদেশী এনজিও ওয়াটসন প্রোগ্রামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আসলেও এক স্থানে প্রচুর মানুষের বসবাসের কারণে দুর্গন্ধ ও মশা থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অল্প জায়গায় বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস ও অসচেতনতার অভাবে অপরিচ্ছন্নতা বেড়েছে।

ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ডেঙ্গুর হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ক্যাম্পগুলোর রোহিঙ্গা ও আশপাশের স্হানীয় মানুষকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষিত রাখা প্রায় কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সব ধরনের চেষ্টা তারা করছেন, কিন্তু ক্যাম্পের মানুষকে সচেতন হতে হবে।
কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পগুলোর অধিকাংশ নালা-নর্দমা উম্মুক্ত, যেখানে সেখানে পানি জমে থাকে। এসবের পানিতে অসংখ্য মশা ও মশার ডিম দেখা যায়। নালা নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এসবের পানিগুলো কুচ কুচে কালো দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় এগুলো সয়েই ক্যাম্পে যাতায়াত ও বসবাস করা হয়।
ক্যাম্পের গোসলখানা ও ল্যাট্রিনগুলো অধিক ব্যবহারের ফলে অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠে। ক্যাম্পগুলোর গোসল ও স্যুয়ারেজের পানি যে পথ ধরে যায় এবং ল্যাট্রিনগুলোর গা ঘেঁষে ঘরগুলো তৈরি হওয়ার কারণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ঘরে বাস করা দূঃসহনীয়।
রোহিঙ্গাদের স্কুল টিচার নুরুল কবির বলেন, ক্যাম্প স্থাপনের শুরুর দিকে এসব জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু গত ৫/৬ বছরে এলাকাগুলো আমাদের অবহেলায় দূষিত হয়ে উঠেছে। এত ছোট এলাকায় এত মানুষ, শিশুদের সংখ্যা এত বেশি— পরিচ্ছন্ন রাখার কথা ভাবা যায় না। একটি মসজিদের ইমাম খায়রুল আমিন ড্রেনে থাকা পানিতে ডেঙ্গু হয় না উল্লেখ করে বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা  পরিবারগুলো পানি ধরে জমিয়ে রাখি, সেখানে ডেঙ্গু মশা জন্মাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও এনজিওদের পক্ষ হতে রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে মিটিংয়ে বলা হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মেনে চলা হয় না।
অনেকের ধারণা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখার দায়িত্ব এনজিওগুলোর। ওয়াটসন প্রোগ্রামের সাথে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর অসংখ্য মাঠকর্মী থাকলেও কার্যত তাদের কর্মপরিধি অনেকক্ষেত্রে লোক দেখানো বলে রোহিঙ্গাদের অভিমত। ক্যাম্প গুলোর অভ্যন্তরে ও সংলগ্ন আশপাশের ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন, গোসল ও ল্যাট্রিনের স্থানগুলো, পাহাড়ের খাদ, ঝিরি,ছরা, পরিত্যক্ত স্থানসহ খালগুলোর জমে থাকা ও চলমান পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশার স্তুপ লক্ষ্য করা গেছে। ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন, গোসল ও ল্যাট্রিনের স্থানগুলো, পাহাড়ের খাদ, ঝিরি,ছরা, পরিত্যক্ত স্থানসহ খালগুলোর জমে থাকা ও চলমান পানিগুলো কুচকুচে কালো ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এক এক ঝাঁকে প্রচুর মশা খিলখিল করতে দেখা যায়। এগুলো আবার ডিম ছেড়ে নতুন প্রজননও করছে বলে স্বাস্থ্য কর্মীরা জানান। বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুজ সেন বলেন, তার এলাকায় ডেঙ্গু মশা ও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ইতিমধ্যে বালুখালী উপ স্বাস্হ্য কেন্দ্র সংলগ্ন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট পরিচালিত হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি এলাকাবাসীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্তকতা অবলম্বনের আহবান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। কারণ, ওই সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। ডেঙ্গুর  প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের জীবন-যাপনে যথেষ্ট অলসতা ও অবহেলা থাকায় কোন কর্মসূচির কাজও পরিকল্পনা অনুযায়ী করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের মাঝে হতাশাও আছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার (২৪/০৭/২০২৩) পর্যন্ত উখিয়ায় ৩৩৬ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছেন। এদের মধ্যে ৪২ জন স্থানীয় রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৩৩৫ জন। এ সময়ে ক্যাম্প১/ইস্ট, ২/ ডাব্লিউ ও ৬ নম্বর ক্যাম্পে একজন করে তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটেছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ক্লিনিক এবং বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে উখিয়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডাক্তার রঞ্জন বড়ুয়া জানান।
কক্সবাজার

পাঠকের মতামত: