কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

সরজমিনে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ট্যাগ অফিসার

উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি চাল বিতরণে অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক::

উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভিজিডি চাল বিতরণ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে। চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম ও ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতায় জালিয়াপালং ১নং ওয়ার্ড সহ ৯টি ওয়ার্ডের উপকারভোগীরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চাল পাইনি বলে অভিযোগ করেন একাধিক ভুক্তভোগী।
বিগত বছরের চাল চলতি বছরে না দেয়া, চলতি বছরের চাল বিতরণে সুক্ষ্ম কারচুপি ও বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদসহ নানান অভিযোগ এই ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ পর্যায়ে ভিজিডি চাল কার্যক্রম পরিদর্শনে জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায় কার্ডধারী উপকারভোগী মহিলাদের আহাজারি। চাল বিতরণকারীদের সাথেও হচ্ছে বাকবিতন্ডা। কেউ বলছে ৩ মাস বকেয়া,কেউ বলছে ৪ মাস বকেয়া। সব বকেয়া চাল তারা ফেরত পেতে করছে প্রতিবাদ। ঘটনাস্থলে একেরপর এক এমন অভিযোগে মাস্টাররোল চেক করে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। তারা কারসাঁজি করে মাস্টাররোলে টিপসই নিয়ে চাল দেওয়া হয়েছে বলে সব ঠিকটাক করে রেখেছেন যাতে কেউ অভিযোগ করলে চাল পেয়েছে বলে দায় সারতে পারেন।

অথচ কার্ডধারী মহিলাদের কার্ডে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে বকেয়া মাস গুলোর খালি রোল গুলো। অন্যদিকে যে মাসে চাল পেয়েছে সেই মাসের ঘরে চাল প্রদানকারীর স্বাক্ষর। বকেয়া মাস আর চাল পাওয়ার মাসগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কার্ডে। যা লুকায়িত করার সুযোগ নেই। চাল পেলে টিপসই এবং প্রদানকারীর স্বাক্ষর থাকে এইসব কার্ডে। চাল বিতরণকারীরা মাস্টাররোলে টিপসই জালিয়াতি করে সকল উপকারভোগী মহিলাদের বলছে চাল দেওয়া হবে না।

ভিজিড়ি চাল কার্ডধারী মহিলা ১নং ওয়ার্ডের মনোয়ারা বেগমের চলের কার্ডে দেখা যায় সেপ্টেম্বর মাসের চাল পাইনি। অথচ মাস্টাররোলে চাল পেয়েছে বলে জাল করে টিপসই দেওয়া হইছে।

একই ওয়ার্ডের রিজিয়া বেগমের কার্ড চেক করে দেখা গেছে জুন,আগষ্ট দুই মাসের চাল পাননি তিনি। কোন কর্মকর্তার স্বাক্ষর বা চাল পেয়েছে এরকম কোন টিপসইও নেই তার কার্ডে। সেই বইয়ের মাস্টাররোলেও দেখা গেছে রিজিয়া বেগম চাল পেয়েছে মর্মে জালিয়াতির মাধ্যনে টিপসই।

এধরণের অসংখ্য কার্ডধারী মহিলা চলতি বছরের ভিজিডি কার্ড শেষ হওয়ার আগে দিক-বেদিক ছুটছে তাদের বকেয়া চাল গুলো পেতে। অনেকেই বলছে সরকারি গোদামে চাল নেই বলে তাদের নিয়মিত আশ্বাস দিয়ে চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত থামিয়ে রাখা হয়ছিল। এই চক্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যখন তারা বকেয়া চাল পাচ্ছে না তখনই সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিতে বাধ্য হন তারা।

খাদ্য গুদাম সুত্রে জানা যায়, যতজন উপকারভোগী রয়েছে তালিকা অনুযায়ী সকলের জন্য চাল পাঠানো হয়েছে জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদে। কারো চাল বকেয়া নেই। এক মাস বকেয়া থাকলে তা পরের মাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের গ্রাম-পুলিশ রশিদ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন এইখানে অনেক দুর্নীতি অনিয়ম হচ্ছে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমরা ছোট লেভেলের কর্মচারী কাউকে তো এসব বিষয়ে বলতে পারি না চোখ বুঝে সয্য করতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারেও এই পরিষদের ১ গাড়ি চাল জব্দ করছিল উপজেলা প্রশাসন। এই চাল গুলো মূলত এভাবে উপকার ভোগীদের না দিয়ে অবৈধভাবে মজুদ করার উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়ার সময় জব্দ করছিল।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সচিব নুর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলছে, যে উপকারভোগীদের কার্ডে মাসভিত্তিক খালিঘর রয়েছে তারা আসলেই চাল পাইনি। যে সকল কার্ডধারী বকেয়া বলে পরিষদে ঘুরছে তারা সকলেই চাল পাবে। তবে কিছু জটিলতার কারণে একটু গড়মিল হয়েছে। মাস্টাররোল অনুযায়ী চাল দেওয়া হয় না সেখানে ভুল থাকতেই পারে।

চেয়ারম্যান সৈয়দ আলম বলছে, ভিজিড়ি চাল দুর্নীতি অনিয়মে আমার হাত নেই। জানি না এমন কেন হলো। আমি শপথ করে বলতে পারব কারো এক টাকার চাল খাইনি। তবে দেখতেছি চালের কার্ড আর মস্টাররোলে কিছু গড়মিল রয়েছে।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি চাল বিতরণ কার্যক্রমে সাথে জড়িত (ট্যাগ অফিসার) দুর্নীতি অনিয়মের কথা স্বীকার করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ হাবিবা জাহান বলেন, প্রাথমিকভাবে কার্ডের অনেক গড়মিল পাওয়া গেছে। উপকারভোগীরা কেন চাল গুলো পাইনি আমরা ইউএনও এর সাথে কথা বলে এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, আমরা শুনেছি জালিয়াপালংয়ের বিষয়টি। পরিষদের সকল উপকারভোগীদের কার্ড এবং মাস্টাররোল গোদামে জমাকৃত চাল জব্দ করতে আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। চাল কার্যক্রমের যাবতীয় নথি সবকিছু তদন্ত করে এসবে যারা জড়িত, প্রকৃত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: