শাহেদ হোছাইন মুবিন:
অনুকূল আবহাওয়া, স্বল্প খরচ, কম পরিশ্রম ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কক্সবাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা চাষ। জেলার ৯ টি উপজেলায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বাজারে শর্ষের তেলের চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর জেলায় ১৮২৩ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সরজমিনে কক্সবাজার সদরের লিংক রোড় ও রামুর বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গাছ দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত বড় হয়ে উঠেছে। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুলে ভরা সরিষার গাছ। ইতোমধ্যে কোনো কোনো ক্ষেতে সরিষার দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
রামুর কৃষক নুর আহমদ বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফুল ধরেছে। আশা করা যায় ফলন ভালো হবে।
গত বছরের তুলনায় দেড় একর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন রামুর কৃষক শফি আলম। তিনি বলেন, বর্তমানে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। অনেকে একে ভোজ্য তেল সয়াবিনের বিকল্প হিসাবেও ব্যবহার করছেন। আর এই ফসল স্বল্প খরচ ও সময়ে পাওয়া যায়। গতবছর ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করলেও চলতি বছর ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করার আশা করছেন।
ঈদগাঁও এর ইউপি সদস্য ও সরিষা চাষি নুরুল আলম বলেন, ইরি-বোরো চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদের আগে খরচ পোষাতেই সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষে ঝামেলা কম। এছাড়া সেচ দিতে হয় না। প্রথমে জমিতে হালচাষ করে সরিষার বীজ বপন করার পর একবার সার দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।
একাধিক কৃষকের অভিমত, ধানের তুলনায় সরিষায় লাভ বেশি। বিগত বছরগুলো থেকে চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে বেড়েছে সরিষার আবাদ।
কক্সবাজারে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আবাদী-অনাবাদী জমিতে কৃষকরা এখন সরিষা চাষ করছেন।
এদিকে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন তোলার পরপরই বপন করা হয়েছে সরিষা। ফুলের হলুদ চাদরে এখন ঢাকা পড়েছে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ। কম খরচে বেশি ফলন হওয়ায় সরিষা চাষে তাদের আগ্রহ বেড়েছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার লিটন দেবনাথ বলেন,দেশীয় বাজারের ভোজ্য তেলের দর বৃদ্ধিতে এবার কক্সবাজার বেড়েছে সরিষার চাষ। রবি মৌসুমের ফসল হিসাবে কৃষকের এতে আগ্রহ বেড়েছে। সার, ওষুধ, পানি ও অল্প পরিচর্যায় এবং সরকারি প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় এবার জেলায় ১৮২৩ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে ।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার লিটন দেবনাথ আরও বলেন,জেলার উপজেলা গুলোতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , ‘চলতি মৌসুমে ৯ টি উপজেলার ৩ হাজার ২’শো চাষিকে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে সরিষা বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আর-ও অনেক চাষিরা নিজ উদ্যেগে সরিষার আবাদ করেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৮২৩ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত অগ্রগতি শতভাগ।
কৃষি বিভাগ বলছেন, অনান্য বছরের তুলনায় এ বছর সরিষার সর্বোচ্চ ফলন পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার। একবছরের ব্যবধানে দুইগুণ বেড়েছে সরিষার চাষ। এছাড়া ভোক্তা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে সরিষা চাষ। আবাদি জমি বাড়ায় বাড়ানো হয়েছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন বুনছেন জেলার হাজার হাজার চাষি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো কবির হেসেন বলেন, ‘আমনের পরপরই পড়ে থাকা খালি জমিতে কৃষকেরা সরিষা ক্ষেত করেছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে ৫- ৭ মন সরিষা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখান থেকে বিঘা প্রতি ফলনের ২৫ হাজার টাকা আয় হতে পারে। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ২ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে। তিনি বলেন, গত বছর ৯২৫ হেক্টর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেখান থেকে ১০ কোটি টাকার সরিষা উৎপাদন হয়েছে।
পাঠকের মতামত: