কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে তিন সুপারিশ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গত তিন বছরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ কারণে সৈকতের আয়তন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে গুপ্তখাল ও বড়সড় গর্তের। গোসলে নেমে খাল বা গর্তে আটকা পড়ে প্রাণহানি ঘটছে পর্যটকদের। সৈকতে ভাঙন নিয়ে গবেষণার পর সম্প্রতি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে গবেষকেরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। এরপর ৭ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় ভাঙনের বেশ কয়েকটি কারণ। সঙ্গে ভাঙন রোধের কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের কোস্টলাইন (সৈকত) ভাঙন রোধে টেকসই ও স্থায়ী প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণসহ তিন ধরনের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।

তিন ধরনের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার আওতায় এতে সৈকত রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এলাকায় প্রকৃতিক ভাবে জন্মায় এমন গাছপালা রোপণ, পর্যটকদের পারাপারের রাস্তা নির্মাণ, ঘেরা–বেড়া তৈরি, জিওব্যাগ স্থাপন ইত্যাদি এবং ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের ক্ষয় রোধে বিচ গ্রোইন (বাঁধ) ও দেয়াল নির্মাণ।

এ ছাড়া ভাঙন রোধে পাহাড় নিধন বন্ধ, ভূমিধস এলাকা চিহ্নিত করা, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির নেমে আসার ছড়াগুলোর (খাল) অবস্থান, গতিপথ শনাক্ত করা এবং পাহাড়ের গাছপালা উজাড় হওয়ার স্থান চিহ্নিত করার জন্য স্যাটেলাইট ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সৈকত রক্ষার পাশাপাশি গবেষকেরা উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ–প্রতিবেশ (ইকো-সিস্টেম‍) রক্ষার ওপরও জোর দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে ইকো-সিস্টেম সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

ছয় সদস্যের ওই অনুসন্ধান দলের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজারের বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্রের এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড ক্লাইমেট ডিভিশনের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু শরীফ মো. মাহবুব ই কিবরিয়া। অপর পাঁচ সদস্যরা হলেন একই ডিভিশনের সায়েন্টিফিক অফিসার মীর কাশেম, সুলতান আল নাহিয়ান, আলমগীর হোসেন, হাসনাত আরেফিন ও আহসান হাবিব।

আবু শরীফ মো. মাহবুব ই কিবরিয়া বলেন, গত ১০ বছরের তুলনায় এবার কক্সবাজারে আকস্মিক বন্যা, ভূমিধসের ঘটনা বেড়েছে। ফলে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা-লাবণী পয়েন্ট এবং হিমছড়ি থেকে দরিয়ানগর পর্যন্ত সৈকতের বেশ কিছু অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে পাহাড় নিধন বন্ধ, ভূমিধস এলাকাগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি পাহাড় থেকে নেমে ঢলের পানির কোনো দিকে যাচ্ছে তা–ও চিহ্নিত করতে হবে। পাহাড়ে পানি সাগর বা নদীতে নেমে যাওয়ার ছড়াগুলোর অবস্থান, গতিপথ চিহ্নিত করতে হবে। খালের প্রবাহের এলাকা দখল হলে তা উচ্ছেদ করতে হবে। খাল ভরাট হলে খনন করতে হবে। তারপর সুরক্ষাদেয়াল নির্মাণ করতে হবে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এ বছর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সমুদ্রতীরে সৃজিত কিছু ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সৈকত ও উপকূলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। অতি ভারী বর্ষণ ও জলাবদ্ধতা এর প্রধান কারণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরিকল্পিতভাবে ঝাউবাগান সৃজনের কারণেও সৈকতের ভাঙন বাড়ছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলেন, সাধারণত উপকূলীয় এলাকায় গাছপালার যে প্রাকৃতিক সন্নিবেশ থাকে, তা কক্সবাজারে নেই। সাধারণ কোনো প্রাকৃতিক সৈকতের প্রথম ধাপে থাকে সাগরলতা জাতীয় বিরুৎ উদ্ভিদ। তারপর নিসিন্দা, কেয়া, আকন্দের মতো গুল্ম উদ্ভিজ্জ এবং তৃতীয় স্তরে হিজল, তমাল অথবা ঝাউজাতীয় বৃক্ষ।

সাগরলতা সমুদ্র ভাঙন ঠেকাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কিন্তু বালিয়াড়িতে সাগরলতা নষ্ট করে সেখানে ঝাউয়ের মতো তৃতীয় স্তরের বৃক্ষ প্রথম স্তরেই রোপণের প্রকল্প প্রতিবছর গ্রহণ করা হয়। বস্তুত ঝাউগাছের শিকড় বালিয়াড়িতে তেমন বিস্তার লাভ করে না। তাই সেটির চারপাশের বালিয়াড়িকে আঁকড়ে ধরতে পারে না। সামান্য সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে গাছ উপড়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে লতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিজ্জের সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সূত্র প্রথম আলো

পাঠকের মতামত: