কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

উপকূলীয় ১০ জেলা

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি কক্সবাজারে, মৃত্যু বরিশালে

চলতি বছর ডেঙ্গুতে ঢাকার বাইরে ৬৪ জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৫৮৬ জন এবং মৃত্যু ৮৪ জনের। এর মধ্যে উপকূলের ১০ জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৬ জন এবং মারা গেছে ৭২ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। এই জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৩০ জন।

আর মারা গেছেন পাঁচজন। এ ছাড়া বরগুনায় আক্রান্ত এক হাজার ৩০৩, মৃত্যু দুজনের।
এ ছাড়া বরিশালে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৫ জন।
ভোলায় আক্রান্ত ৪৮২ এবং মৃত্যু একজনের, চাঁদপুরে আক্রান্ত ৮১৫ জন, মৃত্যু শূন্য। চট্টগ্রামে আক্রান্ত দুই হাজার ৬৪৮ জন, মৃত্যু ২১ জনের, যশোরে আক্রান্ত ৭০৯ এবং মৃত্যু তিনজনের, খুলনায় আক্রান্ত এক হাজার ৮৬৬ জন, মৃত্যু ১১ জনের, পিরোজপুরে আক্রান্ত ৫৯৯ জন, মৃত্যু দুজনের, পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৮৫৮ জন এবং মৃত্যু দুজনের।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, উপকূলের এসব জেলায় এডিসের কোনো ধরনের মশার দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে—এ নিয়ে কোনো গবেষণা নোই। তবে এ অঞ্চলে যদি বৃষ্টিপাত বেশি হয়ে থাকে, এটি একটি কারণ হতে পারে।

কারণ আগে থেকে এসব অঞ্চলে ভাইরাস, বাহক দুটিই ছিল। তবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হলো এসব জেলায় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা দুর্বল, এটা নিশ্চিত বলা যায়। কারণ ডেঙ্গু শনাক্তে প্রাথমিক ব্যবস্থা নেই। প্রাথমিক শনাক্তের ব্যবস্থা যেখানে দুর্বল, সেখানে মৃত্যুর হার বেশি। শেষ মুহূর্তে মানুষ হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে।
কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার বাইরে কী হচ্ছে, তা জানা যাচ্ছে না। কারণ সেখানে কোনো গবেষণা হয় না। সাধারণত শহরগুলোতে ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস ইজিপটাই, আর গ্রামে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটায় এডিস অ্যালবোপিকটাস।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৭ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৭০২। সারা দেশে মারা গেছে ২৬৯ জন। এ ছাড়া গতকাল নতুন ভর্তি রোগীদের নিয়ে দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ২২৫, যা এক বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, ২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

গতকাল পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত রোগে এ বছর প্রাণ গেছে মোট ২৬৯ জনের। এক বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। বছরওয়ারি হিসাবে ২০২৩ সালে এক হাজার ৭০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন এবং ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ডেঙ্গু।

ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে জানুয়ারি পর্যন্ত

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু এ বছর অন্যান্য বছরের মতো হবে না। নভেম্বর-ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকবে। জানুয়ারিতে গিয়ে ঠেকতে পারে।

তিনি বলেন, আজকের বৃষ্টির জমা পানিতে যে মশার জন্ম হবে, সেটির মৃত্যু হতে ডিসেম্বর চলে যাবে। এই সময়ে রোগটি ছড়াবে।

পাঠকের মতামত: