বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্ত দিয়ে গত পাঁচ দিনে অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরসা’ ও আরএসও’র মধ্যে সংঘাতের জেরে শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছেন তারা। এপারে তাদের ঠাঁই হয়েছে তাঁবুতে। সংকটে পড়েছেন খাবার নিয়েও। তাদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অবস্থান গতকাল পর্যন্ত জানা যায়নি।
রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা শূন্যরেখার ক্যাম্পে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যে কোনো সময় সেখানে সংঘাতের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।
গত বুধবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কোনারপাড়া শূন্যরেখার কাছে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) ও ‘আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের’ (আরএসও) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। ওই ঘটনায় একজন নিহত এবং দুজন আহত হন।
গোলাগুলির দিন বিকালে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে ক্যাম্পের সব ঘর পুড়ে যায়।
ঘটনার পর ক্যাম্পের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে কয়েকশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ভূখ-ে চলে যায়। আরও কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবার ক্যাম্পের নিকটবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, আশপাশের পতিত জমি ও তমব্রু বাজার এলাকায় আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমারের ভূখ-ে চলে যাওয়া রোহিঙ্গারাও গত শুক্রবার বাংলাদেশে এসে তমব্রু বাজারের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা পলিথিন, বাঁশ ও ত্রিপলসহ অস্থায়ী উপকরণ দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে অবস্থান করছেন। এতে তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আশ্রয় নেওয়া রফিকুল ইসলাম নামে এক রোহিঙ্গা জানান, বুধবার ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর তারা কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে মিয়ানমারের ভূখ-ে চলে যান। সেখানে একদিন থাকার পর মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীবাহিনী (বিজিপি) জোর করে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
হাফেজ আহমদ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘সবাই ক্যাম্পে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরিদুল আলম বলেন, শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা তমব্রু বাজার ও স্কুলের আশপাশে খালি জায়গায় তাঁবু তৈরি করে নিয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, এটিও নতুন করে একটি রোহিঙ্গা পল্লী হতে যাচ্ছে।
তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, বুধবার থেকে স্কুলের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যেই পাঠদান শুরু হবে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘তমব্রুতে এখন পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। কয়েকটি এনজিও কিছু পলিথিন ও ত্রিপল দিয়েছে। সেগুলো দিয়ে তাঁবু বানিয়ে রোহিঙ্গারা থাকছেন। তাঁবুর আশপাশে স্থানীয়দের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।’
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজীজ বলেন, ‘শূন্যরেখার ক্যাম্পের প্রায় সব রোহিঙ্গাই বাংলাদেশের মূল ভূখ-ে চলে এসেছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘কৌশলগত কারণে সব কথা বলা যাচ্ছে না। এতাটুকু বলতে পারি, সেখানকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) কঠোর নজরদারিতে রেখেছে। আর কতজন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা পাননি বলেও জানান ইউএনও।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুজ্জামান চৌধুরী জানান, শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক রেডক্রস-রেডক্রিসেন্ট কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এসব রোহিঙ্গার ব্যাপারে কী অবস্থান নেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তুমব্রু কোনারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি দেখভাল করে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি)। ক্যাম্পে ৬৩০টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।
পাঠকের মতামত: