কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

হ’ত্যা-লু’ট’পা’ট যারা চালিয়েছে, তাদের উপযুক্ত শা’স্তি’র ব্যবস্থা নেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারাই হ’ত্যা’কা’ণ্ড, লু’ট’পা’ট ও না’শ’ক’তা চালিয়েছে তাদের শা’স্তি’র মুখোমুখি করা হবে বলে হুঁ’শি’য়া’রি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি দ্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হ’ত্যা’কা’ণ্ড, লু’ট’পা’ট ও স’ন্ত্রা’সী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শা’স্তি পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আরও ঘোষণা করছি, হ’ত্যা’কা’ণ্ডসহ যে সব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু বিচারের ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সে সব বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।’

আজ বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। সাড়ে ৭টার দিকে বিটিভিহ সব সম্প্রচার মাধ্যমে এই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, ‘হিজরী ৬১ সনের পবিত্র এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়াসাল্লাম-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা শ’হী’দ হয়েছিলেন। আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলার মাটিতেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হ’ত্যা করে আরেক কারবালা বাংলার মাটিতে সৃষ্টি হয়েছিল। যারা শাহাদাতবরণ করেছেন, আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নি’র্যা’তি’তা মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

প্রিয় দেশবাসী, আজ অত্যন্ত বে’দ’না-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিগত ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবন দেওয়ার যাত্রা শুরু করেছি। অনেক সাফল্যও অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু স্বস্তি-শান্তিতে ফিরে, তখন মাঝে-মধ্যে এমন কোনও ঘটনা ঘটে যা অত্যন্ত বেদ’না’দা’য়’ক।

২০১৮ সালে ছাত্র সমাজের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বা’তি’ল করে একটা পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারের পরিপত্র বা’তি’ল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করে। এ সময় আবার ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। বরং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

দুঃখের বিষয় হলো এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু স্বা’র্থা’ন্বেষী গোষ্ঠী তাদের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করবার জন্য বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও স’ন্ত্রা’সী কর্মকাণ্ড শুরু করে। যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে তাই সকলকে ধৈর্য ধরতে আহ্বান জানাচ্ছি।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে অ’না’কা’ঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাষ চরি’তা’র্থ করবার সুযোগ নিয়ে স’ন্ত্রা’সী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে সব ঘটনা ঘটেছে তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আপনজন হারাবার বেদনা যে কতটা ক’ষ্টের তা আমার থেকে আর কে বেশি জানে?

যারা মৃ’ত্যুবর’ণ করেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি প্রতিটি হ’ত্যা’কা’ণ্ডের নিন্দা জানাই। যে সকল ঘটনাগুলো ঘটেছে তা কখনই কাম্য ছিল না। চট্টগ্রামে স’ন্ত্রা’সী’রা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হ’ত্যা’র উদ্দেশ্যে নি’র্ম’মভাবে নিচে ছুঁ’ড়ে ফেলে অনেক ছাত্রদের হাত পায়ের র’গ কে’টে দেয়। তাদের উপর লা’ঠিপে’টা এবং ধা’রা’লো অ’স্ত্র দ্বারা আ’ঘা’ত করে, একজন মৃ’ত্যুবরণ করেছে, অনেকে মৃ’ত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঢাকা, রংপুর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলে অ’গ্নি’সং’যো’গ, ভা’ঙচু’র করা হয়।

সাধারণ পথচারী, দোকানীদের আ’ক্র’মণ, এমনকি রোগীবাহী এম্বুলেন্স চলাচলে বা’ধা প্রদান করা হয়। মেয়েদের হলে ছাত্রীদের উপর আ’ক্র’ম’ণ করা হয়েছে এবং লা’ঞ্ছি’ত করা হচ্ছে। আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হু’ম’কি দেওয়া ও আ’ক্র’ম’ণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়ে তাদের গা’য়ে হাত তোলা হয়েছে।

আমি বিশ্বাস করি যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তাদের সাথে এই সকল স’ন্ত্রা’সী’দের কোন সম্পর্ক নেই। বরং স’ন্ত্রা’সী’রা এদের মধ্যে ঢুকে সং’ঘা’ত ও নৈ’রা’জ্য’কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শা’স্তি’র ব্যবস্থা করা হবে। যারা হ’ত্যা’কান্ডে’র স্বী’কা’র হয়েছে তাদের পরিবারের জন্য জীবনজীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা দরকার তা আমি করব।

আমি দ্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হ’ত্যা’কা’ণ্ড, লু’ট’পা’ট ও স’ন্ত্রা’সী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শা’স্তি পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমি আরও ঘোষণা করছি, হ’ত্যা’কা’ণ্ডসহ যে সকল অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু বিচারের ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সে সকল বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।

কাদের উ’স’কানি’তে সং’ঘ’র্ষের সূত্রপাত হলো, কারা কোনও উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অ’রা’জ’ক পরিস্থিতির দিকে ঠে’লে দিল, তা তদন্ত করে বের করা হবে।

আমি আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উ’দ্বি’গ্ন। এই স’ন্ত্রা’সী’রা যেকোনও সময়ে সং’ঘা’তের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষ’তিসাধন করতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন। একই সঙ্গে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখেন।

সরকার হাইকোর্টের রায়ের বি’রু’দ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনও বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

এই আইন প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আ’ন্দো’লনে নেমে দু’ষ্কৃ’তি’কা’রীদের সং’ঘা’তের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্র সমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।

ইনশাআল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আামাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সকলের সহযোগিতায় স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।

আমি আবারও এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় যারা  নি’হ’ত হয়েছে তাদের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাচ্ছি।’

পাঠকের মতামত: