কক্সবাজার, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

ট্রলারে ১০ মরদেহ/ যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে ঘটনার রহস্য উৎঘাটনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে নিহত ট্রলার মালিক সামশুল আলম ওরফে সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলার এজাহার জমা দিয়েছেন। অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা এজাহারটি মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি কোনো ধরনের ক্লু এ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েকটি বিষয়টি মাথা রেখে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করেছে। মামলার স্বার্থে নিহতদের স্বজন, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে, কক্সবাজার জেলা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে ঘটনার মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে।

রবিবার (২৩ এপ্রিল) গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধিন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা ট্রলারটি নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে সামশুল আলমের। ১০ জনের সঙ্গে সামশুল আলমের মৃতদেহও পাওয়া যায়।

কক্সবাজার জেলার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ট্রলারটির গায়ে কোনো নাম ছিলো না। ট্রলারটি সমিতির আওতাভুক্তও নয়। এ পর্যন্ত মরদেহ পাওয়া ব্যক্তিরা প্রকৃত জেলে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

 

পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১১ এপ্রিল সাগর থেকে আসা ৬ জেলে নিহতের স্বজনদের ডাকাতি করতে গিয়ে হামলার শিকার, হিমঘরে বন্দি করে ট্রলার ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, সামশু মাঝির ট্রলারে করে ৭ এপ্রিল সাগরে যান ১৯ মাঝি-মাল্লা। গভীর সাগে ৯ এপ্রিল ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করার অভিযোগে মাতারবাড়ির এলাকার বাইট্টা কামাল, নুর হোসাইন বহদ্দারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলার এবং তাদের সঙ্গে থাকা মাতারবাড়ির আবছার মাঝি ও বাবুল মাঝির ট্রলারসহ আরও ৪-৫টি ফিশিং ট্রলার সামশু মাঝির ট্রলার ধাওয়া করে। এ সময় ট্রলারটি পানিতে ডুবে মাঝি-মাল্লাদের হিমঘরে আটকে দেওয়া হয়।

এ তথ্য ৬ জেলে কীভাবে জেনেছেন এবং মাতারবাড়ির যে ৪ ট্রলার মালিক ও মাঝির কথা এসেছে তারা কারাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছেন পুলিশ। যদিও ইতিমধ্যে ওই ৬ জেলে ও মাতারবাড়ির ট্রলার মালিকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে নিয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নানাভাবে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব বিবেচনা করে মামলার তদন্ত চলছে। এ ঘটনার রহস্য বের করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

ওসি জানান, নিহতদের মধ্যে এমন কয়েকজন পাওয়া গেছে যারা জীবনে কখনও সাগরে যাননি বলে স্বজনরা দাবি করছেন। নিহত নুরুল কবির এদের ডেকে সাগরে নিয়ে গেছে। আর নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতির মামলার তথ্য রয়েছে। সব বিবেচনায় মামলাটি লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

এদিকে, ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে ৪ জনের মরদেহ। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাদের পরিচয়। তবে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ চারজন হলেন- শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম।

পাঠকের মতামত: