কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

অপরাধ বেড়েছে পুলিশে

অভিযোগের পাহাড় জমছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। প্রতি বছর বেড়েই চলেছে অভিযোগের সংখ্যা। ছিনতাই, ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের কূলকিনারা করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে প্রতি মাসে দেড় হাজার অভিযোগ জমা পড়ছে। তবে ২০২১ সালে প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার ৭০০ অভিযোগ জমা পড়ে।অভিযোগের কালিমা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কিংবা অনেকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও বাগিয়ে নিচ্ছেন পদোন্নতি ও নিজের পছন্দের পোস্টিং। আবার অনেকে একের পর এক অপরাধ করেও রয়ে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে খোদ সরকারেরই শীর্ষ মহলে। সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দুর্নীতির ক্ষেত্রে পুলিশকে শীর্ষে দেখানো হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থেকে অনেক সরে আসার কারণেই ঐতিহ্যবাহী পুলিশ বাহিনীতে এমনটা হচ্ছে। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তারা। প্রায়শই দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে সুবিধা নিচ্ছেন সেখানে বিভাগীয় শাস্তি ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এ বিষয়টি বাহিনীর অনেক সদস্যের মধ্যেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের অনেকেই অপরাধের দিকে উৎসাহিত হচ্ছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এবং তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনেরও পরামর্শ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের।

২০১৭ সালে কক্সবাজারে ১০ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে জব্দ দেখানো হয় মাত্র ১০ হাজার। বাকি ৯ লাখ ৯০ হাজার পিস বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হয় পুলিশের নিজস্ব তদন্তে। ওই ঘটনায় ছয় কর্মকর্তা ও তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তখনকার এসপি এ কে এম ইকবাল হোসেন ও দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নামমাত্র তিরস্কার করা হয়। তিরস্কৃত এসপি ইকবাল হোসেন সম্প্রতি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতির ঘটনায় সদর দফতরের তদন্তে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয় তখনকার রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদ হাসান, ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম, আসলাম হোসেনসহ ছয় এসআইর বিরুদ্ধে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে শাস্তির বদলে তাদের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং দেওয়া হয়। এখন তারা এর চেয়েও ভালো জায়গায় পোস্টিংয়ের জন্য তদবির করছেন। এ তো গেল মাত্র দুটি ঘটনা। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও অল্প দিনের মধ্যে ভালো জায়গায় পদায়ন ও পদোন্নতি নিয়েছেন আরও অনেকে।

রয়েছেন বহাল তবিয়তে। জানা গেছে, ১২ মে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসে বাংলাদেশ সরকারের সরবরাহ করা তথ্য অনুসারে, দেশের আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ২ লাখ ১৩ হাজার সদস্যের মধ্যে ২০ হাজার ৫০০ জন, অর্থাৎ প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সদস্য ২০২১ সালে বিভাগীয় তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ১৭ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদর দফতরে। ওই সময়ের মধ্যে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্তত ১ হাজার ৬৯২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়। ২০২১ সালে মোট ১৭ হাজার ৯৬৬ জন সদস্য সতর্কতা, তিরস্কার বা অস্থায়ী বেতন হ্রাসের মতো ছোটখাটো শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। আর ২ হাজার ৩৮৮ জন হয়েছিলেন বরখাস্ত বা পদাবনতির মতো বড় শাস্তির মুখোমুখি। পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতিবছরই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে।

২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরের বছর এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫১২। ২০২০ সালে আরও বেড়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফারজানা রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশ বাহিনীতে কেবল কনস্টেবল থেকে এসআই, অর্থাৎ নিম্ন পদের সদস্যদের বিচার হয়। সেগুলোই মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। কিন্তু উচ্চ কিংবা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা দোষী প্রমাণিত হলেও তাদের বেশির ভাগকেই ভর্ৎসনা কিংবা তিরস্কার করা হয়। নিচের পদের যারা দুর্নীতি করেন তাদের থেকে কি ঊর্ধ্বতনরা ভাগ পান না!’ পুলিশের অপরাধ তাদের নিজেদের দিয়ে তদন্ত না করিয়ে অন্য একটি নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে করানো উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে সিলেটে বন্দর ফাঁড়িতে রায়হান নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় অনুসন্ধানে গিয়ে আমরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। অভিযুক্ত সেই এসআই আকবর দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তার ঊর্ধ্বতনরা সবাই বিষয়টি জানতেন। তাহলে ওই ঘটনার আগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন? একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, পুলিশ সদস্যরাও বাংলাদেশের নাগরিক। প্রচলিত আইনে প্রতিটি অপরাধের শাস্তির বিষয়টি বলা আছে। কেবল তিরস্কার কিংবা ভর্ৎসনা করা হলে বাহিনীর অন্য সদস্যরাও উৎসাহিত হন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হওয়ার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অন্যান্য সংস্থার ওপরও।’ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শাস্তি যদি দিতে হয় সবাইকে স্পর্শ করতে হবে। সিনিয়র অফিসার এক রকম আর জুনিয়র অফিসারকে অন্য রকম- এটা সংগত নয়। তবে দেখতে হবে তদন্তটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না। সিনিয়র অফিসারদেরও তো গুরুতর শাস্তি হয়। চাকরি যায়। আবার সিনিয়র অফিসারদের জন্য তিরস্কার ও ভর্ৎসনা অনেক বড় শাস্তি। এর জন্য তার তিন থেকে পাঁচ বছর পদোন্নতি স্থগিত হয়ে যায়। ইনক্রিমেন্ট হেল্ডআপ হয়। এগুলো তো কম নয়! জানা গেছে, পুলিশ আইন অনুযায়ী, কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির (লঘু ও গুরু) বিধান রয়েছে। গুরুদন্ডের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদোন্নতি স্থগিত, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত ও চাকরিকালীন সুযোগ-সুবিধা রহিত করা হয়। অপরাধ প্রমাণ হলে বরখাস্ত করা হয়।

বিসিএস ক্যাডারের পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে একটি সেল রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশেরই সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন ঘটনায় ভুক্তভোগী ৭৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ থানায় অভিযোগ জানাননি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, অভিযোগ না করার পেছনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, মামলা করার সময় এবং আদালতে হাজির হওয়ার সময় প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া, পুলিশের অবন্ধুত্বসুলভ আচরণ এবং আর্থিক সম্পৃক্ততা।

জানা গেছে, ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অপরাধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ২০২০ সালের ৩০ মে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো এক চিঠিতে মোহাম্মদ ইমাম হোসেনকে বদলির সুপারিশ করেছিলেন। চিঠিতে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেন একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। এর ১০ দিন পর (৯ জুন) কমিশনার তাকে বদলি করেন পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম)। তবে মাত্র ২০ দিনের মাথায় ২৯ জুন তাকে সিআইডিতে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদায়ন করা হয়। ১৬ আগস্ট ডিআইজি (চলতি দায়িত্ব) পদে পদোন্নতি পান ইমাম হোসেন।

২০১৫ সালে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) থাকাকালে শ্যামল কুমার নাথের গাড়িচালক ও বডিগার্ড ইয়াবাভর্তি পিকআপ ভ্যান নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে কুমিল্লায় দুর্ঘটনাকবলিত হলে ধরা পড়েন। পরে র?্যাব এই দুই পুলিশ সদস্যকে আটক করে। জেলার এসপির বাসা থেকে ইয়াবা পাচারের তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দফতর তৎকালীন এক ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজিকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি শ্যামল কুমার নাথের ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ততার তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন দিলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। ১৬ আগস্ট তিনিও ডিআইজি (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে পদোন্নতি পান। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের উল্টো পুরস্কৃত করার সংস্কৃতি কী বার্তা দিচ্ছে বাহিনীর অন্য সদস্যদের? গণমানুষের আস্থার সংকটের বিষয়েও কি কর্তৃপক্ষ কখনো ভেবে দেখেছেন? প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার ও জবাবদিহির চর্চা করা না গেলে ভবিষ্যতেও এমনটিই হবে। তিনি বলেন, পুলিশ বিভাগে দুর্নীতির বিষয়টি নতুন নয়।

গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন গবেষণায় বহুবার তা উঠে এসেছে। তবে ভালো পুলিশিংয়ের উদাহরণ নেই এটাও কিন্তু সঠিক নয়। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগের তুলনায় ভালো পুলিশিংয়ের হার খুবই কম। সম্প্রতি টিআইবির খানা জরিপে উঠে এসেছে, পুলিশ যেসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি করে সেসব খাতের মধ্যে সবচেয়ে ওপরে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের অবস্থান। এর পরই হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, সব শেষ অবস্থানে রয়েছে স্পেশাল ব্রাঞ্চ। একটি সাধারণ ডায়েরির জন্য গড়ে ২০৩৫ টাকা, ট্রাফিক-সংক্রান্ত বিষয়ে ৩২২৪ টাকা, গ্রেফতার-সংক্রান্ত বিষয়ে ৯৯১৮ টাকা, মামলার তদন্ত-সংক্রান্ত বিষয়ে ১০১০৪ টাকা, এফআইআর করতে ১০৫৫৪ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার যেসব সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে যারা দুর্নীতির শিকার হয়েছিলেন, এর মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে গ্রেফতার সম্পর্কিত বিষয়ে, যা প্রায় ৯২.৮ শতাংশ।

জমি দখল, গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির দীর্ঘদিনের অভিযোগ পটুয়াখালী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপুল হালদারের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রুবেল খান নামে এক যুবককে তুলে নিয়ে চরম নির্যাতন করেন তিনি। গুরুতর অবস্থায় রুবেল পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তিনি থানায় মামলা করতে যান। তবে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া  হয়। পরে ২ অক্টোবর পটুয়াখালীর সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী মো. রুবেল খান বাদী হয়ে এসআই বিপুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন (সিআর মামলা নম্বর-১৩১১/২২)। ওই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য রুবেলকে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন এসআই বিপুল ও তার সহযোগীরা। প্রাণভয়ে রুবেল এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশের সাবেক এবং কর্মরত একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নির্যাতন থেকে শুরু করে ঘুষ, মাদক চোরাকারবার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, অবৈধভাবে আটক করাসহ পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।

এসব অপরাধের অভিযোগ মূলত পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। তাদের তদারকি কর্মকর্তাদের ওপর কালেভদ্রে দায় দেওয়া হচ্ছে। এই সংস্কৃতি থেকে বের না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রমতে, ঢাকার একটি পুলিশ ইউনিটে কর্মরত একজন কনস্টেবল পুলিশ বিভাগে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আত্মসাতের অপরাধে দুই বছরের মধ্যে দুবার বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হন। ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এখনো একই ধরনের আরেকটি অপরাধের তদন্ত চলছে। কয়েক বছর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কর্মরত অবস্থায় রেশন কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে নাফিদুল ইসলাম নামে আরেক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। নাফিদুল ও পুলিশের আরেক সদস্যসহ তিনজনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে গত বছর সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করেছে শাহজাহানপুর পুলিশ।

আলোচিত কিছু ঘটনা : এ ছাড়া সম্প্রতি পুলিশ সদস্যদের কিছু ঘটনা বিভিন্ন মহলে নেতিবাচকভাবে আলোচিত হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর এক পথচারীর পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে তাকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ওই ব্যক্তিকে ফাঁসানোর অভিযোগে পুলিশ সদস্য আলম ও তার দুই সোর্সকে গ্রেফতার করা হয়। কেরানীগঞ্জে এক জুয়েলারি দোকানের কর্মীর কাছ থেকে ৯৮ তোলা স্বর্ণ লুটের অভিযোগে ১২ সেপ্টেম্বর কনস্টেবল কামরুজ্জামান ও তার সাত সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ জুলাই রাজধানীর গাবতলী এলাকায় এক জুয়েলারি দোকানের কর্মীর কাছ থেকে ৩৮ তোলা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুল ইসলাম ও তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত এএসআই ওই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এসআই মাসুদুর রহমানের দলের সদস্য ছিলেন। গত বছর ১৯ আগস্ট ঢাকার রূপনগর এলাকার এক নারী অভিযোগ করেন, অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যান এসআই মাসুদুর। ৮ জুলাই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার এক কনস্টেবলসহ চারজনকে ৫ হাজার ২৬০টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসব ঘটনার মধ্যে গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ না করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শিরোনামে উঠে আসা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের তথাকথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা ছিল দেশের মানুষের কাছে আলোচনার বিষয়।

এ ছাড়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে দুজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়েরের পর তাদের প্রত্যাহার করা হয়।

পুলিশ সদর দফতরের বক্তব্য : পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশে দুর্নীতি জিরো টলারেন্স ঘোষণা অনেক আগ থেকেই। সব অভিযোগেরই যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সদর দফতর। তদন্তে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি ফৌজদারি অপরাধ করলে ফৌজদারি মামলাও করা হয় বলে জানান তিনি। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: