কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আজ ভাসানচরে পৌঁছাবে আরও ১ হাজার ৭৮০ রোহিঙ্গা

উন্নত জীবনের আশায় তৃতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন আরও ১ হাজার ৭৮০ জন রোহিঙ্গা। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে কয়েক ধাপে ৩৫টি বাসে চেপে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছেন তারা। তাদের মালপত্র বহনের জন্য এই বহরে ছিল আরও কয়েকটি ট্রাক। সরেজমিন উপস্থিত থেকে এ চিত্র দেখা গেছে।

ভাসানচর আশ্রয়ন-৩ প্রকল্পের পরিচালক কমোডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আজ রাতে তাদের চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এখানে রাতের মধ্যে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার ভোরে তাদের জাহাজে তোলা হবে। দুপুর নাগাদ তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন।

তিনি আরও জানান, শুক্রবারও আরও কয়েকশ’ রোহিঙ্গার উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামের শাহীন কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে আসার কথা রয়েছে। তারা এলে তাদেরও শনিবার একই ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে পাঠানো হবে।

উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন রোহিঙ্গারা।
উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন রোহিঙ্গারা।
কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, আমাদের এবারে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কত জন যাচ্ছে তা শনিবারের পর বলা যাবে।

এর আগে দিনের শুরুতে তৃতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

গত ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জনের দ্বিতীয় দলটিকে ভাসানচরে নেওয়ার ঠিক এক মাস পরে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দলটি সেখানে যাচ্ছে। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসিমুখে ভাসানচরে পৌঁছায়।

ভাসানচরে রওনা হওয়া মো. ইব্রাহিম নামে এক রোহিঙ্গার কাছে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার পরিবার সদস্যরা আগে সেখানে গিয়েছেন। সেখান থেকে তারা ভাসানচরের যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে আমারও যেতে ইচ্ছা করছে। এখানে ঘিঞ্জি, নোংরা, ঝুপড়ি ঘরের চেয়ে ওখানে উন্নত জীবন আছে। সেখানে কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে শুনেছি। তাই সেখানে চলে যাচ্ছি।

গত ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জনের দ্বিতীয় দলটিকে ভাসানচরে নেওয়ার ঠিক এক মাস পরে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দলটি সেখানে যাচ্ছে। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসিমুখে ভাসানচরে পৌঁছায়। এছাড়াও গতবছরের মাঝামাঝি অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ার পথে যাত্রা করে ধরা পড়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাও শুরু থেকে আছে ভাসানচরে। ফলে নতুন এই দলটি নিয়ে সাগর দ্বীপটিতে রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা হতে যাচ্ছে ৫ হাজার ৫২৬ জন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী ভাসানচরে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের ব্যবস্থা করা আছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

পাঠকের মতামত: