কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আজ হুমায়ুন ফরীদির জন্মবার্ষিকী

শিল্পের নামে অখাদ্য, দূষণ আর ক্ষমতা তোষণের দেশে আমাদের একজন ফরীদি ছিলেন। অভিনয়ই করতেন তিনি। এর বাইরে কিছু নন। আমৃত্যু বাঁচতে চেয়েছেন পেশা অভিনয়কে ধারণ করে। সম্ভবও করেছেন তা। আবার পারেননি অনেক কিছু।

১৯৫২ সালের আজকের দিন ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় তার জন্ম। ৫৯ বছরের নশ্বর জীবন শেষে ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তার অনন্তলোকে যাত্রা। আমরা ইতোমধ্যে অতিক্রম করছি হুমায়ুন ফরীদিহীন ১০টি বছর। তার শূন্যতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন প্রকৃত শিল্পবোধ আছে যাদের তারা। অন্যদের কাছে ফরীদির দরকার নেই। তারা মেতে থাকতে পারেন শক্তিমান অভিনেতার বোহেমিয়ান জীবনের যত গসিপ নিয়ে।

অভিনয়ে দিয়ে নিজেকে উজাড় করা ফরীদির এ পথে হাঁটা কৈশোরে। ১৯৬৫ সালে বাবার চাকরি সুবাদে ছিলেন মাদারীপুর। এই মাদারীপুর থেকেই নাট্য জগতে প্রবেশ। তার নাট্যঙ্গনের গুরু তখন বাশার মাহমুদ। এই গুরুর নির্দেশনায় শিল্পী নাট্যগোষ্ঠী নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন কিশোর ফরীদি। কল্যাণ মিত্রের “ত্রিরত্ন” নাটকে “রত্ন” চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম দর্শকদের সামনে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৬৮ সালে আবার স্থান বদল। বাবার চাকরির কারণে চাঁদপুরে ফরীদি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি কলেজে। পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। তখন আসে মুক্তিযুদ্ধের ডাক। ক্যারিয়ারের চিন্তা বাদ মাথা থেকে। পড়া অসমাপ্ত রেখে হুমায়ুন ফরীদি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বিজয়ের পর ঢাকামুখী হন না। ফিরে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন অর্থনীতি বিভাগে। এখানে সবচেয়ে বেশি সখ্যতা হয় আজকের বাংলাদেশে প্রতিরোধের প্রতিশব্দ অর্থনীতিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অ্যাকটেভিস্ট আনু মুহাম্মদের সঙ্গে। দু’জনই থাকতেন আল-বেরুনী হলের এক্সটেনশনে।

২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় আনু মুহাম্মদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “. . . ক্যাম্পাসে আসার পরই যার সঙ্গে প্রথম ও স্থায়ী বন্ধুত্ব, সে হলো এই ফরীদি। এমনিতে সে আমার চেয়ে বড় ছিল। কয়েক বছর গ্যাপ দিয়ে আবার অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েছিল। আমরা খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। আমার হল পরিবর্তনেরও সে বড় কারণ। ওর আগ্রহেই এক্সটেনশনে চলে এলাম। ফরীদির বাসায় গেছি, ওর পরিবারের সঙ্গেও অনেক ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। পরীক্ষার সময় তো একসঙ্গেই পড়তাম। আমাদের চারজনের একটা গ্রুপ ছিল। আমি, ফরীদি, বাকি দুজনের একজন রুমমেট—ভূগোলের অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক, আরেকজন কবি ফজল মাহমুদ।. . .”

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের আরেকটি স্মৃতিচারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র হুমায়ুন ফরীদির সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা অনুভব করা যায়- “. . .ওর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনি, যাত্রার কিংবা নাটকের কিংবা চলচ্চিত্রের সংলাপ শুনি। গানও। রাতে-দিনে, লেকের পাড়ে, বসে, কিংবা হাঁটতে হাঁটতে। ওর জীবনকাহিনী বৈচিত্র্যময়; নাটকীয় এবং নাটককেন্দ্রিক। নাটক শিল্প নিয়ে ওর পড়াশোনা, চিন্তা, আগ্রহ ওকে প্রায় ধ্যানগ্রস্ত করে রাখত, কখনো কখনো অস্থির। সে সময় আমাদের অগ্রজ বন্ধুর মতো ছিলেন সেলিম আল দীন, মোহাম্মদ রফিক। আমাদের আড্ডায় প্রায় নিয়মিত উপস্থিতি ছিল তাদের। সেলিম ভাই তত দিনে নাটক রচনায় নতুন ধারা তৈরি করেছেন, রফিক ভাই কবিতায়।

পাঠকের মতামত: