কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ইসলামে কুসংস্কারের কুফল

মানুষের তৈরি যুক্তিহীন কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস, কথা, কাজ ও প্রথাকে সহজ বাংলায় কুসংস্কার বলা হয়। কুসংস্কারের কারণে বেশির ভাগ মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। সমাজ বা মহল্লাভিত্তিক তো কোথাও কুসংস্কারের কবলে জীবনহানির ঘটনাও ঘটে যায়। কুসংস্কার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে একপর্যায়ে শিরকের পর্যায় চলে যায়। আবার এমন কিছু বিষয়, যা সাধারণ বিবেকবিরোধী এবং রীতিমতো হাস্যকর।

আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতা, বর্বরতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্নর যুগে সবার মধ্যে উদ্ভট কিছু ধারণার জন্ম নিয়েছিল। যেমন—সেই যুগের মানুষেরা আকাশের দিকে পাখি উড়িয়ে দিত। পাখিটি যদি ডান দিকে যেত, তাহলে তারা ভাবত, সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আর যদি বাম দিকে উড়ে যেত, তাহলে কুলক্ষণ বলে ধারণা করত। আবার কখনো তির ছুড়ে দিত, তিরের দূরত্ব দেখে তারা ভালো-মন্দ নির্ণয় করত। যদি কখনো আকাশ মেঘে কালো হয়ে যেত তারা মনে করত তাদের সামনে দুর্ভোগ দেখা দেবে। লোক সকলের মাঝে সবচেয়ে ভ্রান্ত ধারণা ছিল সফর (আরবি মাস) মাস তাদের জন্য নিকৃষ্ট ও ভয়ংকর মাস। এ মাসে তারা বিবাহ থেকে দূরে থাকত আবার এ মাসে সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তানকে অমঙ্গল বলে ধারণা করতেন।

যখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন হলো তখন তিনি এসব ভ্রান্ত ধারণা দেখে বললেন, ‘অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, বরং তা শুভ বলে মনে করা ভালো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! শুভ লক্ষণ কী? তিনি বললেন, এরূপ অর্থবোধক কথা, যা তোমাদের কেউ শুনতে পায়।’ (বুখারি শরিফ)

আমাদের সমাজে এখনো অনেক ব্যক্তি আছেন যারা কুসংস্কারে বিশ্বাসী। শহরাঞ্চলে কম দেখা দিলেও গ্রামাঞ্চলে এর মাত্রা অতিক্রম করে গিয়েছে। যেমন—বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ ‘সদকা’ করতে হয়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পেছন দিকে ফিরে তাকানো নিষেধ, তাতে যাত্রা ভঙ্গ হয় বা যাত্রা অশুভ হয়, শকুন ডাকলে বা প্যাঁচার ডাককেও বিপদের কারণ মনে করা ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা ইসলাম প্রচারের জন্য যুগে যুগে পয়গম্বরদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা একবার একসঙ্গে তিন জন পয়গম্বরকে দুনিয়ায় প্রেরণ করলেন। তারা জনসাধারণের মধ্যে দাওয়াত প্রচার শুরু করার পর মাত্র এক জনকে ইসলাম গ্রহণ করাতে পারলেন। সেই সাহাবিকে নিয়ে যখন দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন তখন সবাই তাদের অচেনা, ভণ্ড, কবিরাজ বলে সবার মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করলেন। একসময় যখন সেই এলাকায় এক মহামারি দেখা দিল, দায়ী হিসেবে সবার মুখে ঐ তিন জন পয়গম্বরের নাম। তারা প্রচার করতে লাগলেন অচেনা তিন জন ব্যক্তিই মহামারি নিয়ে এসেছেন। অতঃপর তাদের শারীরিক নির্যাতন এবং মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এলাকা হতে বের করে দিলেন। পয়গম্বররা আল্লাহর বাণী শোনালেও তারা বুঝে উঠতে পারেনি। তবে পয়গম্বররা একটি কথাই বারবার বলেছেন, ‘মহামারি বা আজাব কোনো ব্যক্তি বহন করে নিয়ে আসতে পারে না, স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত হয়।’ আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। সুরা: বাকারা ১৫৫

কুসংস্কার মূলত অজ্ঞতা ও অশিক্ষা থেকে সৃষ্টি হয়। যার ফলে সমাজে নানা রকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই অজানাকে জানতে হবে, অচেনাকে চিনতে হবে। প্রত্যেকের উচিত প্রতিটি বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান ও পরিষ্কার ধারণা রাখা। এজন্য চাই সঠিকভাবে জ্ঞান অন্বেষণ ও বিদ্যার্জন। ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে অত্যাবশ্যক করা হয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞানের দ্বার বিকশিত হলেই সমাজ থেকে কুসংস্কার দূরীভূত হবে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান রাখে আর যে জ্ঞান রাখে না, তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ —সুরা আল যুমার ৯

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মতামত: