কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ার কুতুপালং বাজারে রোহিঙ্গা ঈমাম হোসেনদের বেঈমানী কারবার

শ.ম গফুর, উখিয়া::

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ব্যস্ততম কুতুপালং বাজারটি রোহিঙ্গা কালোবাজারিদের আকামের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে।মোবাইলের দোকান, কাপড়ের দোকান,জুতা-স্যান্ডেলের দোকান, মুদির দোকান ও কম্পিউটার দোকানের আড়ালে বৈধ-অবৈধ সব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে রোহিঙ্গা কালোবাজারিরা।এসব দেখার কেউ নেই বললেই চলে। দিব্যি এত আকাম সারালেও রহস্যজনক নিরবতায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

এ বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা বিক্রেতা আবার রোহিঙ্গা।কাঁটাতার পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের কুতুপালং বাজারে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে কুতুপালং বাজারকে ঘিরে যাবতীয় অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।রয়েছে রোহিঙ্গাদের আহামরি ডাক্তার।যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা সনদ ও চিকিৎসক হিসেবেও সনদ নেই।শত-শত রোহিঙ্গা পরিচালিত ঔষধের দোকান দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে দুই নাম্বারী ঔষধ বিক্রির ব্যবসা।দোকান পাট, রাস্তাঘাট রোহিঙ্গাদের দখলে।কাদের আস্কারায় রোহিঙ্গারা কুতুপালং দখল আর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেল? প্রশ্ন জাগছে জনমনে।

জানা যায়, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওর্য়াডে অবস্থিত ৫ বছর পূর্বের ছোট্ট বাজারটি এখন উখিয়ার অন্যতম বৃহত্তর বাজার। এটি রোহিঙ্গা বাজার নামেও সমধিক পরিচিত। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে বাজারটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। খাস জমি ও সরকারি জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত কুতুপালং বাজারটি স্থানীয় জনগণের কাছে পরিচিত ইয়াবা,হুন্ডি ব্যবসা ও জঙ্গি আস্তানা হিসেবে। কারণ এ বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী ইয়াবা, হুন্ডি ও অপরাধী চক্র। ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন পুলিশের নজরদারি সত্বেও বাজার ঘিরেই চলছে কোটি কোটি টাকার মাদকের লেনদেন। এ ছাড়াও দেশ বিদেশে সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ চলে এ বাজার থেকেই।
কুতুপালং বাজারের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা ইমাম হোসেন ও সাদেক। মিয়ানমার থেকে কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আসার পর ইমাম হোসেন ও সাদেক কুতুপালং বাজারে দুটি ছোট্ট দোকান নিয়ে বসে। যদিও রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে এসে দোকান করা নিষেধ। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতাবলে রোহিঙ্গা ইমাম হোসেন ও সাদেকরা দোকানদারি করে যায় বাধাহীন ভাবে।

প্রথমে হুন্ডি দিয়ে শুরু। কারণ প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের অধিকাংশের টাকা বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতো বিদেশে অবস্থান করা তাদের আত্বীয় স্বজনরা। হুন্ডি থেকে ইয়াবা। ইয়াবার টাকা হালালে মোবাইল ব্যবসা।আড়ালে ইয়াবা বাণিজ্য করে কোটিপতি ইমাম হোসেন ও সাদেক। দু’জনই সক্রিয় আল ইয়াকিন সদস্য।স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী চক্রের আশির্বাদ থাকায় দোকানে বসে এ কাজ করতে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছেনা।

ইদ্রিস ও ইলিয়াস। দু,জনই রোহিঙ্গা। কুতুপালং বাজারে রয়েছে তাদের একাধিক দোকান। এদের দুজনও সক্রিয় আল ইয়াকিন সদস্য।দিনের বেলায় নামকাওয়াস্তে দোকানদারি। সন্ধ্যার পর শুরু তাদের আসল ব্যবসা। ইয়াবা বাণিজ্যে সম্পৃক্ত এ দু’ভাই মিয়ানমারের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ইমাম হোসেন,সাদেক, ইলিয়াছ, ইদ্রিস, সেলিম, সোলায়মান, মোঃ আমিন ভুট্টো রয়েছে সহস্রাধিক কালোবাজারী। যাদের একচ্ছত্র আধিপত্যে চলে কুতুপালং বাজারের ব্যবসা।
তেমনি হাজারো রোহিঙ্গাদের দোকান রয়েছে কুতুপালং বাজারে। এসব রোহিঙ্গারা দোকানের আড়ালে বিদেশি এজেন্ট, ইয়াবা বাণিজ্য সহ বিভিন্ন অপরাধ করে যাচ্ছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে দোকান নিয়েছে একাধিক। এসব দোকানের মধ্যে বেশিরভাগ কম্পিউটার, মোবাইল ও কাপড়ের দোকান।

ক্যাম্পের কাটাতারের বাইরে এসে দোকানদারি করার নিয়ম না থাকলেও হাজারো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে এসে প্রতিদিন দোকান করে আবার ভেতরে চলে যাচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে স্থানীয়রা। স্থানীয় মার্কেট মালিকদের আস্কারা পেয়ে রোহিঙ্গারা বসতি গড়ে তুলছে কুতুপালং এলাকার আশেপাশে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী আইডি কার্ড করে দেওয়ার ককন্ট্রাক্ট নিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।

এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া শাখার সভাপতি সাংবাদিক নুর মুহাম্মদ সিকদার বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে বিচরণ স্থানীয় জনগণের জন্য হুমকি। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়সহ আরো কিছু বিষয় সামনে নিয়ে আমরা কক্সবাজারবাসীর ব্যানারে আন্দোলন করে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি এপিবিএন পুলিশ দেখে। তবু্ও বিভিন্নভাবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এপিবিএনের সাথে সমন্বয় করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করার জন্য। আশাকরি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেক বিষয় সমাধান হবে।

পাঠকের মতামত: