কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়া-টেকনাফে কমছে না ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা

রফিকুল ইসলাম::

মাদকের সর্বনাশা বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তরুণ প্রজন্মকে এর অভিশাপ থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালের ৪ মে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

এরপর বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাও মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে গতকাল টেকনাফে বিজিবির সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহতসহ তিন জেলায় ৫ জন নিহত হয়েছে।

কিন্তু গত প্রায় আড়াই বছরে মাদক কারবারের ব্যাপকতা কমেনি বরং বেড়েই চলছে, বিস্তৃতি ঘটছে মাদক ব্যবহার, পাচার, মজুূদ, বাজারজাত, অবৈধ লেনদেনের বহুমাত্রিক ডালপালা। কার্যত মিয়ানমার তৈরি ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা এখন আর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই। এর বিস্তৃতি ঘটেছে দেশের দক্ষিণ -পশ্চিম উপক‚লীয় এলাকাসহ ভারত সীমান্তে।

আশা করা হচ্ছিল করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে ইয়াবাসহ অনান্য মাদক পাচার ও ব্যবসা অনেকটা কমে আসবে। কিন্তু অতীতের তুলনায় তা বেড়েছে কয়েকগুণ।

সর্বশেষ শনিবার (২৫ জুলাই) গতরাতে টেকনাফের মোছনী খাল দিয়ে মিয়ানমার থেকে পাচার করে আনার সময় বিজিবি উদ্ধার করেছে ২ লক্ষ ১০ হাজার পিস ইয়াবা। এতে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে উখিয়ার বালুখালী -১ ক্যাম্পের দুই রোহিঙ্গা।

আগেরদিন শুক্রবার টেকনাফ পুলিশ উদ্ধার করে ৪০ হাজার ইয়াবা। ঐদিন বন্দুক যুদ্ধে উখিয়ার বখতিয়ার মেম্বারসহ এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানে শনিবার পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮২ জন নিহত হন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৯৫ জন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬৯ জন, বিজিবির সঙ্গে ৬০ জন ও র‍্যাবের সঙ্গে ৫১ জন। কিন্তু তবুও কমেনি ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের সর্বশেষ তালিকায়, কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে শুধু টেকনাফে রয়েছেন ৯১২ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা তালিকায় কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আছেন ৭৩ জন। দেশব্যাপী এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিন হাজারের মতো ব্যবসায়ী, যাঁদের সাড়ে তিনশ’র মতো গডফাদার রয়েছে। এসব ব্যবসায়ী ও গডফাদার সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর তালিকাভুক্ত। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চলা এত বড় অভিযানেও অনেকেই ধরা পড়েনি।

এখনো বড় বড় ইয়াবার চালান যে আসছে, তা স্বীকার করেই কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সেটা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে আসছে। তাঁর দাবি, টেকনাফে আগে যাঁরা ইয়াবা ব্যবসা করতেন, তাঁদের ৯০ শতাংশ এখন ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। দুই দফায় ১২৩ জন ইয়াবা কারবারি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

ইয়াবা কারবারীর মধ্যে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতা আছেন। তারাই মূলত নেপথ্যে মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। আর মাদক চক্রের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য রয়েছেন। মুলত অনেকটা চিহ্নিত এসব ‘হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল’দের শক্তিশালী দুষ্টু চক্রের বৃত্ত ভাঙা না গেলে মাদকবিরোধী অভিযানের সুফল পাওয়া কঠিন।

পাঠকের মতামত: