কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

এসএসসি পাসে জজ, যখন সর্ব রোগের চিকিৎসক!

টেনেটুনে করেছেন এসএসসি পাস। পল্লী চিকিৎসার ওপর একটি কোর্স করে নামের আগে ডাক্তার লিখে দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন দিয়ে আসছেন শরিফুল ইসলাম জজ নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের ভাটকৈ বাজারে বছরের পর বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সকল রোগের চিকিৎসা করে আসছেন জজ ডাক্তার নামে পরিচিত এই চিকিৎসক। তার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে অনেকেই পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ভুক্তভুগী সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশ থেকে আসা শতশত কিডনি, ক্যান্সার, প্যারালাইজ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, নাক-কান-গলা, বাতের ব্যথাসহ যে কোন ব্যথাসহ সকল রুগীর চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন চিকিৎসক জজ। তিনি শুধু রোগী দেখে কোন প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই হাই-পাওয়ারের অ্যান্টবায়েটিক, ব্যথার ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। এতে করে গ্রামগঞ্জের নিরীহ মানুষগুলো তাৎক্ষণিক ব্যথার ইনজেকশনে আরাম পেয়ে যান। যার কারণে জজ ডাক্তারের নাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু না বুঝেই সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়াই এই হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই স্থায়ী ভাবে পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, তাৎক্ষণিক ভাবে জজ ডাক্তার রোগীদের দেখে একটি নামবিহীন সাদা কাগজের প্যাডে ঔষধের নাম লিখে দিচ্ছেন আর ওই ঔষধগুলো তার দোকান ছাড়া অন্য দোকানেও মিলে না। বিভিন্ন বেনামী কোম্পানির সঙ্গে আতাত করে নিম্মমানের ঔষধগুলো বিক্রি করে নিরীহ মানুষগুলোকে ঠকিয়ে যেমন হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ তেমনি ভাবে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষগুলোকে ঠেলে দিচ্ছেন স্থায়ী ক্ষতির দিকে। জজ ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণের পর অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এদের মধ্যে যাদের অর্থ আছে তারা অন্যত্র চিকিৎসা নিচ্ছেন আর যাদের অর্থ নেই তারা বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। জজ ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা নিয়ে অনেকেরই হাত কিংবা পা কেটে ফেলতে হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকের।

উপজেলার শফিকপুর গ্রামের আফজাল সরদার বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমার হাঁটুতে সামান্য ব্যথা শুরু হয়। আমি দিনমজুর মানুষ। কাজ করতে গিয়ে হাঁটুতে একটু ব্যথা পাই এবং ভাটকৈ বাজারের ডাক্তার জজ এর কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে ৩শত টাকা নিয়ে আমাকে হাঁটুর গিড়াতে একটি ইনজেকশন করেন। পরপর ৮মাসে ৮টি ইনজেকশন করেন ডাক্তার জজ। এখন আমি আর হাঁট চলা করতে পারি না। কোনো মতে লাঠি ধরে চলা ফিরা করি। ৮মাসে ডাক্তার জজকে ৪থেকে ৫হাজার টাকা দিয়েছি। ডাক্তার জজ এর কাছে চিকিৎসা নিয়ে এখন আমি পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাজারের অনেক পল্লী চিকিৎসকরা বলেন, পল্লী চিকিৎসকদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা। কিন্তু জজ ডাক্তার ব্যথানাশকের ইনজেকশনগুলো কোন ডিগ্রিধারী বিশেজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ ছাড়াই কিভাবে প্রদান করেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা দেখেছি জজ ডাক্তার এমন কোন রোগ নেই যার চিকিৎসা সেবা তিনি প্রদান করেন না। তবে দ্রুত জজ ডাক্তারে এই দৌরাত্ম বন্ধ করতে না পারলে হাজার হাজার মানুষ এক সময় পঙ্গু হয়ে যাবে।

পল্লী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম জজ বলেন, আমি এসএসসি পাশ করেছি কিন্তু এইচএসসি পাশ করতে পারিনি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভাটকৈ বাজারে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। অনেক জটিল জটিল রোগ আমি চিকিৎসা দিয়ে ভালো করছি। যার কারণে অনেক দূরদুরান্তের মানুষরা আমার কাছে চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন। লুঙ্গি পড়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, যে তিনি রোগীদের চাপে অন্য পোষাক পড়ার সময় পান না। তিনি চিকিৎসা বিষয়ে কোন উন্নত প্রশিক্ষন নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে কিংবা কোন সনদপত্র দেখাতে পারেননি জজ ডাক্তার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, আমি এই ডাক্তার সম্পর্কে শুনেছি। পল্লী চিকিৎসকরা শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান পূর্বক ঔষুধ বিক্রয় করতে পারেন। তবে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ওই চিকিৎকের খোজ-খবর নিয়ে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, অতি দ্রুতই চিকিৎসা বিভাগের কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে জজ নামক ওই চিকিৎসকের চিকিৎসালয় পরিদর্শন করবো। জজ ডাক্তার যদি নিয়ম বর্হিভূত চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: