কক্সবাজার, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

পোল্যান্ড থেকে দেশে মাদক ডিওবি

ওষুধও ব্যবহার হচ্ছে মাদক হিসেবে, ছড়িয়েছে সারা দেশে

মৃত্যুপথযাত্রীর যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ অক্সি-মরফোন দেশে মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, এমনকি সম্প্রতি এর ব্যবহারও বাড়ছে। একসময় ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই ওষুধ। এখন ট্যাবলেট আকারে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এই ট্যাবলেট তরুণদের একটি অংশ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মাদক হিসেবে সেবন করছে।

রাজধানীর কোতোয়ালি ও ধানমন্ডি থেকে ১৩ হাজার পিস অক্সি-মরফোনসহ চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। গ্রেফতার দুজন হলেন আলমগীর সরকার ও জাহিদুল ইসলাম। এর আগে শুক্রবার পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ধানমন্ডি শাখায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে কুরিয়ারের মাধ্যমে পোল্যান্ড থেকে দেশে এসেছে ভয়াবহ এক মাদক ডিওবি (ডাইমেথ অক্সি ব্রোমোঅ্যামফেটামাইন)। কিছুটা এলএসডির মতো দেখতে এই মাদকের চালান আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সংস্থাটির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) বলছে, বাংলাদেশে এ ধরনের মাদক এই প্রথমবার আটক করা হয়েছে। গতকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, ডার্ক ওয়েবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে পোল্যান্ড থেকে এই মাদক আনা হয়েছে।

কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে এর চালান এসেছে। তারা প্রথম এ ধরনের মাদক আটক করেছেন। এটি দেশের তালিকাভুক্ত ‘ক’ শ্রেণির মাদক। দেখতে কিছুটা এলএসডির মতো। ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সি-মরফোন বিক্রি ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়, যা শুধু সেসব কোম্পানির লাইসেন্স দিয়ে আনা হয়।

এমনকি পরিবহনের রুট এবং কার কাছে বিক্রি করা হবে তাও জানানো হয়। দেশে অক্সি-মরফোন আমদানি ও বিক্রির জন্য একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জিসকা ফার্মা, যারা সারা দেশে ১২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সরবরাহ করে থাকে। গত পাঁচ মাসে ৫ লাখ ডোজ অক্সি-মরফোন বিক্রি করেছে তারা। এটি শুধু রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে ব্যবহার করা যাবে। অক্সি-মরফোন হলো মরফিনের একটি এনালগ, যা একটি এনালজেসিক ড্রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এটি ইনজেকশন থেকে ওরাল ফর্মে নিয়ে আসা হয়েছে। এটি মূলত কাজ করে সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমে (ব্রেইন)। তীব্র ব্যথানাশক হিসেবে ক্যান্সার, হার্ট, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

মাদক হিসেবে অক্সি-মরফোন ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, অক্সি-মরফোন একটি ইউফোরিক ড্রাগ, যা মস্তিষ্কে প্রচ- আনন্দ-অনুভূতি তৈরি করে। শরীরে সাময়িকভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক বোধহীন, অসাড় হয়ে যায়। ক্রমাগত অক্সি-মরফোন ব্যবহারে এটির প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। ব্যবহারকারীরা এটি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অপরাধকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।

পাঠকের মতামত: