কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারে আবার লবণ উৎপাদন শুরু, দৈনিক উৎপাদন ৮ হাজার মেট্রিক টন

কক্সবাজার উপকূলে পুনরায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখন দৈনিক গড়ে উৎপাদন হচ্ছে আট হাজার মেট্রিক টন। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক গড়ে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ হাজার মেট্রিক টন। তবে ২০ মার্চ ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির কারণে জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার ৬৬ হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। চাষিরা বলেন, একবার বৃষ্টি হলে কমপক্ষে সাত থেকে আট দিন মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে।

আজ মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, ভারোয়াখালী, পিএমখালী ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। চনমনে রোদ থাকায় আকাশও পরিষ্কার।

চৌফলদন্ডীর চাষি মমতাজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, গত শুক্রবার থেকে পরিত্যক্ত মাঠে নতুন করে লবণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। গতকাল সোমবার থেকে তিনি লবণ সংগ্রহ শুরু করছেন। তবে এপ্রিলের কাল বৈশাখী ঝড় নিয়ে তাঁর আতঙ্ক যাচ্ছে না।

চাষিরা বলেন, এপ্রিল শুরুতে এবং মাঝামাঝিতে কয়েক দফা ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। ওই সময় লবণ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তখন পরিত্যক্ত মাঠ লবণ উৎপাদনের জন্য আবার উপযোগী করে তুলতে চাষিদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টি হলে খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়, এ কারণে অনেকেই লবণ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস) কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ১৮ মার্চ পর্যন্ত চার মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৮৮১ মেট্রিক টন, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় তিন লাখ মেট্রিক টন বেশি। গত বছর এই সময়ে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ৯ লাখ ৬৯ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন। কিন্তু ঝড়বৃষ্টি চলতে থাকলে অবশিষ্ট প্রায় ১ মাস সময়ে লক্ষ্যমাত্রার আরও ১১ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২০ মার্চ বৃষ্টি শুরু হলে পুরো জেলার ৬৬ হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সাত দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে পুনরায় মাঠে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ওই দিন জেলার ৩৫ হাজার একরের বেশি জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ। পর দিন সোমবার ৪০ হাজার একরে উৎপাদিত হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন। আজ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হতে পারে। জেলার ৬৬ হাজারের বেশি জমির শতভাগ জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু করতে আরও কয়েক দিন সময় লেগে যাবে। তখন দৈনিক ২০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদিত হবে। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ১৭ মার্চ। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকা।

লবণের দাম বাড়াতে চান চাষিরা

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের মামুন পাড়ায় তিন একরের মাঠে লবণ চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক নজিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল তিনি প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকা। ২০ মার্চের আগে দাম ছিল ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা। তবে বৃষ্টির কারণে ৭ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে দামও প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ লবণ চাষি সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী জানান, বৃষ্টির কারণে সাত দিন লবণে উৎপাদন বন্ধ থাকায় জেলাতে কমপক্ষে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার প্রান্তিক চাষি। আগামী মাসে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে লবণ উৎপাদন আবার ব্যাহত হবে। তখন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

লবণের দাম ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি, মাঠে উৎপাদিত প্রতি মণ লবণের দাম ৫০০ টাকা নির্ধারণের জন্য। কিন্তু লবণ মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম সময়ে-অসময়ে ২৫০ টাকা থেকে ৩৭০ টাকার মধ্যে কিনছেন। এতে প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

লবণের ব্যবসা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে দাবি করে মহেশখালীর লবণচাষি ও কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, চাষিদের দাবি, মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণের দাম মৌসুমজুড়ে ৪০০ টাকার বেশি থাকুক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ রেখে মাঠপর্যায়ে চাষিদের সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় লবণ বেচাবিক্রির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে ৫০০ টাকায় লবণ বিক্রিও হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সিন্ডিকেট চক্র দাম ২৫০ টাকা কমিয়ে চাষিদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

পাঠকের মতামত: