কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে ধর্ষণ মামলার সত্যতা পায়নি পুলিশ : বাদির ‘নারাজি’ আদালতে

কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করেছে পুলিশ।

মামলার আসামি ফিরোজ আহমদ (৪৭), রাসেল উদ্দিন (৩৮), মো. শরীফ (৪৮) ও নুরুল ইসলাম (৪৮)কে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের নিমিত্তে ১৭৩ ধারা মতে গত ২৫ জুলাই আদালতে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) নাছির উদ্দিন মজুমদার।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৭/৯ (৩)/৩০ তৎসহ ৩৮০ ধারায় গত ১৫ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ঈদগাঁও ইসলামাবাদের ৮ নং ওয়ার্ডের আউলিয়াবাদের শফিকুল ইসলামের মেয়ে রুনা আক্তার (২৯)। যার জিআর মামলা নং-১৭৭/

/২০২২। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ৪ আসামি ছাড়া অজ্ঞাতনামা ছিল আরো ৫ জন। মামলার সকল আসামি জামিনে রয়েছে। তবে কারান্তরীন ফিরোজ আহমদ, মো. শরীফ ও নুরুল ইসলাম অন্য মামলার আসামি হওয়ায় সহসা মুক্ত হচ্ছে না।

পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান আসামি ফিরোজ আহমদ বাদিনী রুনা আক্তারের স্বামী। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার্ড কাবিননামামূলে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য ও বিরোধ দেখা দেয়। মামলার অন্যান্য আসামিরা প্রধান আসামি ফিরোজ আহমদের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়।

গত ১৪ মার্চ স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া থামানো ও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন রাসেল উদ্দিন, মো. শরীফ ও নুরুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তদন্তকালে সাক্ষ্যপ্রমাণ, সিসিটিভি ফুটেজ, ডাক্তারি রিপোর্ট বিশ্লেষণে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। বরং এলাকার কতিপয় কু-চক্রিমহলের কুপরামর্শে স্বামী ও তার বন্ধুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে। বাদিনী রুনা আক্তার অভিযোগের স্বপক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি।

এদিকে, পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ‘নারাজি’ দিয়েছেন বাদিনী রুনা আক্তার। ১০ আগস্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার আদালতে আবেদন দেন। পরবর্তী ধার্য তারিখে আবেদনের শুনানি হবে।

বাদিনী উল্লেখ করেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নি তদন্ত কর্মকর্তা। সাক্ষী ও ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে মিথ্যা ফেরবি, ‘মনগড়া প্রতিবেদন’ আদালতে দাখিল করেছেন। আসামিদের প্রতি অন্যায়ভাবে বশীভূত হয়েছেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ঘটনার বিষয়ে তদন্ত না করায় তার অফিসে গিয়ে আকুতি মিনতি করেন ভিকটিম রুনা আক্তার। ঘটনার বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ করলে উল্টো হুমকি ধমকি দেন তদন্ত কর্মকর্তা। আসামিদের সঙ্গে আপোষ মীমাংসা করতে বলেন। অন্যথায় মিথ্যা প্রতিবেদন দিবে বলে জানান। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে আসামিদের কথিত মতে ঘটনার বিষয়কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করেছেন।

বাদিনী রুনা আক্তার নারাজিতে আরো উল্লেখ করেন, প্রকৃতপক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেন নি। সাক্ষীগণের জবানবন্দি নেননি। নিজের অফিসে বসে ইচ্ছামতো জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। সঠিক তদন্ত করলে ঘটনা সত্য প্রমাণ হতো।

দাখিলকৃত প্রতিবেদন বাতিলপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ কিংবা অন্য কোন এজেন্সিকে নিরপেক্ষ তদন্তভার প্রদানের আবেদন জানান রুনা আক্তার।

এ বিষয়ে তার নিয়োজিত আইনজীবী আব্দুল শুক্কুর বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধার্য তারিখে সেটি শুনানি হবে।

তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) সাহাব উদ্দীন সাহীব বলেন, বাদিনী নিজের স্বামীকে এজাহারে ‘স্বামী’ স্বীকৃতি না দিয়ে তথ্য গোপনপূর্বক মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, মিথ্যা ও সাজানো।

তিনি বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীগণ বিজ্ঞ আদালতের নিকট ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধরামতে জবানবন্দিতে ‘এমন ঘটনা ঘটেনি’ মর্মে জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্যপ্রমাণ, জবানবন্দি ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক সব কিছু বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন’ দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এডভোকেট সাহাব উদ্দীন বলেন, যা সত্য তাই তদন্তে ওঠে এসেছে। মামলাটি চূড়ান্তভাবে আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হবে, আশা করছি।

পাঠকের মতামত: