কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার শহরে রাতে দ্যূতি ছড়াচ্ছে ‘ওয়াটার মিউজিক্যাল শো’

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার::

কক্সবাজারে বেড়াতে এসে দিনের বেলা সৈকতের বালিয়াড়িতে দাপিয়ে বেড়ানোর পর রাতে শহরে দেখার বা উপভোগ করার কিছু নেই এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যুগ যুগ ধরে চলে আসা অভিযোগের কিছুটা অবসান হয়েছে।

পুনর্বাসনসহ ভৌত সুযোগ-সুবিধার সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের পর গোলদিঘী পুকুর রাতের শহরে দ্যূতি ছড়াচ্ছে। পর্যটকসহ স্থানীয়রাও ছুটে আসছেন পানির রংবেরং পোয়ারায় ‘ওয়াটার মিউজিক্যাল শো’ অবলোকনে।

২০১৯ সালে শহরের ঐতিহ্য মাখা ভরাট প্রায় তিনটি দীঘিকে সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ার কাজ শুরু করেছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতায় কাজ আটকে থাকলেও প্রাণান্তকর চেষ্টায় ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে গোলদিঘি পুকুরের পরিবর্তিত প্রকল্পের কাজ।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দিনগত রাত ৯টায় ওয়াটার মিউজিক্যাল শো’র মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের পুকুরটি পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য উন্মুক্ত করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত লালদিঘী, গোলদিঘী ও বাজারঘাটা পুকুরের সৌন্দর্য্যবর্ধন কক্সবাজারের পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দিনে সৈকতে হাওয়া ও জলের সাথে খেলা করা পর্যটকটি সন্ধ্যার পর এখানে এসে দিব্যি সময় কাটাতে পারবেন। এমন একটি প্রকল্প হাতে নেয়ায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মন্ত্রী।

পর্যটনের স্বার্থে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এরকম উন্নয়নমূলক প্রকল্প আরো গ্রহণ করলে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দেন মন্ত্রী শরীফ আহমেদ। পাশাপাশি কউকের যাবতীয় প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতার আহবানও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে আধুনিক রূপে সাজানোর জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে লালদিঘী, বাজারঘাটা ও গোলদিঘীর পুকুর সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি কক্সবাজারের প্রধান সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ, পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, বঙ্গবন্ধু থিম পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্মার্ট সিটি বাস্তবায়নসহ আরো বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কউকের কাজকে অগ্রগামী করবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, ময়মনসিংহ-১০ এর সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, রাজনৈতিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা প্রমুখ।

কউক সচিব আবু জাফর রাশেদ জানান, কক্সবাজার শহরকে একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়তেই ৪৮ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে শহরের লালদীঘি, গোলদীঘি ও বাজারঘাটাস্থ নাপিতা পুকুরকে কেন্দ্র করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিন পুকুরের মধ্যে গোলদীঘি ও বাজারঘাটাস্থ নাপিতা পুকুরের কাজ শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে পুকুর দুটির সবুজ বেষ্টনী, সাইকেল স্ট্যান্ড, পুকুরের পাড়,ওয়াকওয়ে, রিটেইনিং আলোকসজ্জা মানুষের নজর কেড়েছে। দৃষ্টিনন্দন পুকুর দুটিকে ঘিরে এখন বিনোদনপ্রেমীদের দিবারাত্রি আনাগোনা সেখানে।

তিন পকুরের মধ্যে লালদীঘি পুকুরটি জনৈক ব্যক্তির হাইকোর্টে একটি রিটের কারণে মাঝখানে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। তবে রিটটি খারিজ করে দেয়ায় এখন পুরোদমে লালদীঘি পুকুরের কাজ চলছে।

কউক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ বলেন, গোলদিঘি পুকুরটি পর্যটসহ স্থানীয় বিনোদন প্রেমিদের জন্য এর মধ্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

বাজারঘাটাস্থ নাপিতা পুকুরের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেটিও খুব শিগগিরই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। আর শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে লালদিঘী পুকুরের কাজও এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে। দ্রুত কাজ শেষ করে সেটিও সবার জন্য উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের এ তিন পুকুরই পর্যটন খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। একই সাথে কক্সবাজার শহরের চিত্রই পাল্টে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত: