কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কবে হবে ইউপি নির্বাচন

মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ও উপনির্বাচনের বিষয়ে নতুন করে ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

দুর্বিপাকজনিত কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আগের জনপ্রতিনিধিরাই আপাতত পরিষদ চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এটা তো আর ফি মেয়াদে চলতে পারে না। যে কারণে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার সঙ্গে সঙ্গেই যাতে নির্বাচনগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে ফেলা যায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান আরজু মানবকণ্ঠকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইসির প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে শতাধিক ইউপির ভোট সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অস্বাভাবিক অবনতিতে নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় কমিশন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ভোটের কর্মযজ্ঞ শুরু করা হবে।

nagad
ঈদের পর এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে মহামারী পরিস্থিতির ওপর। লকডাউন শেষ হলে হয়তো ঈদের পর ইসি এ বিষয়ে ভাবতে পারে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘ বিরতির পর দেশে যখন নতুন করে নির্বাচনী ডামাডোল বাজা শুরু হয়েছিল ঠিক তখনই আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রাণসংহারি করোনা। থাবা বসায় ভোটের আয়োজনে। দিন দিন ভাইরাসটির প্রকোপ বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর ভোট স্থগিত করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ১৬৩টি ষষ্ঠ ধাপের ১১টি পৌরসভার মধ্যে ৯টি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পিছিয়ে দেয়া হয় তিন সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনও।

এদিকে মেয়াদ ফুরিয়েছে, তফসিল ঘোষিত হয়নি এমন নির্বাচনগুলোর ভবিষ্যত নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ইসির ইচ্ছে ছিল, কোরবানি ঈদের আগেই তফসিল ঘোষিত নির্বাচনগুলো সেরে ঈদের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বাকি নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করার। কিন্তু করোনার প্রকোপ অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়তে থাকায় ভেস্তে গেছে সে সব।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় প্রথম ধাপে দেশের ১৯ জেলার ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছিল ইসি। গত ১১ এপ্রিল এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ষষ্ঠ ধাপে ১১ পৌরসভার নির্বাচনও ওইদিন হওয়ার কথা ছিল। ১ এপ্রিল নির্বাচন ভবনে কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল।

এর আগে গত ৩ মার্চ দেশের ১১টি পৌরসভা ও ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। একই সঙ্গে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য পদ হারানো শহীদ ইসলাম পাপুলের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ভোট স্থগিত করতে বাধ্য হয় কমিশন।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে প্রথমেই তফসিল ঘোষিত স্থগিত নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করা হবে। সেক্ষেত্রে স্থগিত থাকা প্রথম ধাপের ১৬৩টি ইউপি এবং ৯টি পৌরসভায় আগে ভোটগ্রহণ করা হবে। সংক্রমণের হার না বাড়লে বছরজুড়েই চলবে নির্বাচন। বেশ কয়েকটি ধাপে শেষ করা হবে দেশের সাড়ে চার হাজার ইউপির ভোট। এ নিয়ে গতমাসে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় ভোট করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ইসি। করোনা পরিস্থিতি সহনীয় থাকলে ঈদের পর বছর জুড়ে ভোট করে ইউপিসহ অন্যসব নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।

তথ্যানুযায়ী, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের হিসাব পরিষদের মেয়াদের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পূর্ববর্তী নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। নির্বাচন বিষয়ে আইনের ২৯ (৩) ধারায় বলা আছে- ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে ৫ (পাঁচ) বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’

অর্থাৎ বর্তমান পরিষদের নির্বাচন যে তারিখে হয়েছে, তা হতে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন ভোট হতে হবে। এ হিসেবে তফসিল ঘোষিত ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও দেশের অর্ধেকেরও বেশি ইউপির ভোটের সময় পার হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭২৫টি, ৩১ মার্চ ৬৪৪টি, ২ এপ্রিল ৬১৫টি, ৭ মে ৭০৩টি, ২৮ মে ৭১৮টি এবং ৪ জুন ৬৯৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে বেশিরভাগ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় পার হয়ে গেছে। এসব ইউপি এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররাই পরিচালনা করছেন।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মেদ এ বিষয়ে বলেন, অন্যান্য পরিষদের ক্ষেত্রে প্রথম বৈঠকের তারিখ ধরে ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ববর্তী ৯০ দিন বা ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে ৫ বছর পূর্তির পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। এ হিসেবে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে।

তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। আইনের স্পিরিট হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট করতে হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট না হলে কি হবে সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। এক্ষেত্রে বর্তমান পরিষদকেই এটি চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, পরিষদ বিলুপ্ত করা যাবে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব ভোটে যেতে হবে।

পাঠকের মতামত: