কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

করোনার চিকিৎসায় চার ওষুধ নিয়ে কাজ করছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

যেকোনো রোগের প্রতিষেধক তৈরিতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। সময়টা এমন সংকটকালীন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে ঘড়ির কাটার উলটো দিকে চলছে এক রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগিতা। একদিকে বিজ্ঞানীদের প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রচেষ্টা অন্যদিকে চলছে মৃত্যুর মিছিল। হাঁপিয়ে ওঠা পৃথিবী কান পেতে আছে এই বুঝি বার্তা এলো— বেঁচে যাবে অসংখ্য নিরীহ প্রাণ।

করোনাভাইরাস এখন প্রায় সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাসে সংক্রমণের পর থেকে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকরা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও এইচআইভি, ইবোলা কিংবা ম্যালেরিয়ার ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ দাবি করছে রোগীরা এসব ওষুধে সুস্থ হয়ে উঠছেন। বিশ্বব্যাপী রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালানো এমন চারটি ওষুধ নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, চারটি ওষুধ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি হলো ড্রাগ ককটেল। ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির, দুটি এইচআইভি ড্রাগ— লোপিনাভির ও রিটোনাভির সংমিশ্রণ; লোপিনাভির ও রিটোনাভির প্লাস ইন্টারফেরন বিটা এর আরেকটি ককটেল; এবং অ্যান্টিম্যালেরিয়া ড্রাগ ক্লোরোকুইন।

এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়েড সায়েন্সেসের একদল গবেষক প্রতিষেধক হিসেবে ইবোলার পরীক্ষামূলক ওষুধ রেমডেসিভিরকে বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে পাঁচটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দুটির ফলাফল এপ্রিলের প্রথম দিকে পাওয়া যাবে।

ডব্লিউএইচও বলছে, এসব ওষুধ রোগীদের ওপর ব্যবহার করার আগে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে। এর আগে ইবোলার রোগের চিকিৎসার ওষুধে লিভারের বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্ভাবনা দেখা যায়।

এ নিয়ে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ কেন্টের ভাইরোলজিস্ট জেরেমি রসম্যান বলেন, রেমডেসিভির ওষুধে করোনা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা আছে। তবে এটি কতটুকু কার্যকর সেটা জানা প্রয়োজন।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে চীনের বিজ্ঞান একাডেমির ওয়াং মানলির নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল জানিয়েছে, ক্লোরোকুইন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। চীনা শ্বাসতন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞ ঝং নানশান এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ওষুধটি নিরাপদ কারণ এটি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হয়েছিল।

এর পরবর্তীধাপে আসে এইচআইভি’র ওষুধ লোপিনাভির ও রিটোনাভির সংমিশ্রণ। সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী এই ককটেল করোনা চিকিৎসায় কার্যকর ছিল না। চীন-জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কও বিন বলেন, করোনায় আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদের মধ্যে এ ওষুধে কোন ফল পাওয়া যায়নি।

এরই মধ্যে জাপানের ফ্লু ড্রাগ যা ফেভিপিরাবির করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছে। শ্বাসতন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞ ঝং নানশান বলেন, চীনে ৩৪০ রোগীর ওপর এ ওষুধ দেওয়া হয়। এ ওষুধ বেশ ভালোভাবে রোগীদের ওপর কাজ করেছে। তবে এই ওষুধেরও প্রয়োজন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের। যদিও ফেভিপিরাবির নিয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করছে না।

যেকোনো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা দেখার জন্য প্রয়োজন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের। আর এর জন্য প্রয়োজন সময়ের। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোন ওষুধ সমক্ষ এটি নিয়েই চলছে গবেষণা আর প্রস্তুতি।

উখিয়া বার্তা ডটকম/

পাঠকের মতামত: