কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

করোনা চিকিৎসায় দেশের বৃহত্তম হাসপাতাল হলো ৩ সপ্তাহে

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে মাত্র ১০ দিনে হাসপাতাল তৈরি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় চীন। এবার বাংলাদেশে মাত্র ২১ দিনে করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় হাসপাতাল তৈরি হলো। তবে এর অবকাঠামো আগেই প্রস্তুত ছিল, শুধু মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও শয্যা বসিয়ে এ হাসপাতাল তৈরি হয়।

বিবিসি বাংলার সংবাদে বলা হয়, ২ হাজারের বেশি শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতাল নির্মাণে জমি তথা অবকাঠামো দিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপ। আর এটিকে হাসপাতালে রুপান্তরের কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার।

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) চারটি কনভেনশন সেন্টার এবং একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে গড়ে উঠেছে দেশের সবেচেয়ে বড় এই কোভিড-১৯ হাসপাতাল।

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর জানান, এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গফুট জায়গা তারা সরকারকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন।

হাসপাতালটিতে যা থাকছে:

অস্থায়ী এ হাসপাতালটি নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘এখানে আসলে আইসোলেশন করে রাখা হবে আর পোর্টেবল অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। দুই বেডের মাঝখানে আমরা বিদ্যুতের লাইন টেনে দিয়েছি ওখানে সকেট আছে। কোনো রোগীর যদি পোর্টেবল অক্সিজেন লাগে অথবা অন্য কিছু লাগে যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায় এবং ডাক্তাররা যেন তার রুমে বসে প্রত্যেকটা রোগীকে দেখতে পারেন তার জন্য সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মনিটরটা ডাক্তারের রুমে থাকবে, উনি দেখতে পাবেন।’

হাসপাতালটিতে ইতিমধ্যে ২ হাজারের বেশি শয্যা পাতা হলেও আইসিইউ ইউনিট ও ভেন্টিলেশন সুবিধা এখনো সংযোজন করা হয়নি। করোনা রোগীদের জন্য এ দুই সেবা খুবই জরুরি। তবে এর জন্য ৪৫ হাজার বর্গফুট জায়গা প্রস্তুত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে জানিয়েছেন বসুন্ধরার কর্মকর্তারা।

কবে থেকে চিকিৎসা শুরু হবে?

বসুন্ধরা গ্রুপের জায়গায় হাসপাতালটি নির্মাণে ১৪ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়। হাসপাতাল প্রস্তুত হয়ে গেলেও কবে থেকে চিকিৎসা শুরু হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো জায়গাটা দেওয়া, এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। ডাক্তার, নার্স আর মেডিকেল যন্ত্রপাতি ছাড়া সবই আছে। ডাক্তার এবং নার্সের দায়িত্ব সরকারের, এটা আমাদের দায়িত্ব না।’

হাসপাতালটিতে কতজন ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী লাগবে?

করোনা চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালের জন্য ইতিমধ্যেই একজন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতাল পরিচালনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দৈনিক আট ঘণ্টা করে তিন ধাপে দায়িত্ব পালনের জন্য ৩১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৬৩০ জন মেডিকেল অফিসার, ১২৬০ জন সিনিয়র নার্স ও ২৫২০ জন স্টাফ নার্সের জন্য চাহিদাপত্র প্রস্তুত করেছেন তারা। চাহিদাপত্র অনুযায়ী ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য সেবাকর্মী পেলে তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করা যাবে।

করোনা শেষে হাসপাতালটির কী হবে?

সামাজিক দায়িত্ব থেকে এ হাসপাতাল নির্মাণে জায়গা দিয়েছেন বলে জানান সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৬টি প্রতিষ্ঠান আছে যার প্রতিটি থেকে লাভ করি। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আয় না করলে কিছু হবে না। দেখুন দুনিয়াতে এটা একটা সংকট চলছে এখন, একটি বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব এ মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করা।’

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি বলেন, ‘এটা খুবই জনবহুল একটা দেশ, যদি এটি (কোভিড-১৯) ভয়াবহ রূপ ধারণ করে তাহলে এটাকে সামলানোর মতো অবকাঠামো বাংলাদেশে নাই এখন পর্যন্ত। তাই আমরা চিন্তা করলাম, আমরা আমাদের কনভেনশন সেন্টারকে অস্থায়ী সেন্টার হিসাবে কেন ব্যবহার করি না?’

করোনাভাইরাস মহামারি শেষে হাসপাতালটির ভবিষ্যত কী? এটি স্থায়ী হাসপাতালে রুপান্তরিত হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমরা ব্যবসায়ী, কত ধরনের কত কিছু হতে পারে, এই বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে অনেক কিছুই তো হতে পারে, তাই না?’

পাঠকের মতামত: