কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতা থেকে দেশে দুটি নম্বরে নিয়মিত ফোন করতেন মাজ

বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ কলকাতায় অবস্থানকালে দুটি নম্বরে নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতেন। আর এই দুটি নম্বরে আড়ি পেতেই বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মাজেদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান- বাংলাদেশে মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাততো সে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে মাজেদ কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন, সেই তথ্য সহজেই জেনে যায় তারা। এরপরই মাজেদকে গ্রেপ্তারের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়। তবে কলকাতা শহরে মাজেদের অবস্থান জানতে খুব সম্ভবত ভারতের কোনও গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। যদিও এনিয়ে কোনও সরকারই মুখ খোলেনি। তদন্তে জানা গেছে, কলকাতায় মাজেদ যে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন, তার একটিও নিজের নামে ছিল না। তিনি স্ত্রীর নামে সিম কার্ড কিনেছিলেন।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মাজেদ রাতারাতি দেশ ছেড়েছিলেন- এ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সময় ভারত হয়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে যান মাজেদ। কিন্তু সুবিধা করতে না পারায় সেখান থেকে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় কি কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছিলেন মাজেদ? সঙ্গত কারণেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গোয়েন্দাদের মনে। তার পার্ক স্ট্রিটের ভাড়া বাড়ি থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ওই পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছেন অনায়াসে। তার আধার কার্ড নম্বর হল ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এছাড়াও ২০১২ সালে মাজেদ সচিত্র ভোটার কার্ড বানিয়েছিলেন। মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতেন মাজেদ। এমনকি খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেতেন তিনি।

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এমনিতে সুদের কারবার ও টিউশনির টাকায় সংসার চললেও সম্প্রতি তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন মাজেদ। গোয়েন্দারা মনে করছেন, সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে টাকা আসত মাজেদের কাছে। কিন্তু সেই ফ্ল্যাটে আর পা দেওয়া হল না তার। তার আগেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হলো তাকে।

কলকাতার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত সুজিত ভৌমিকের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘ঘাতকের ডেরা’র তৃতীয় পর্ব থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা ডেস্ক প্রতিবেদন।

পাঠকের মতামত: