কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মেজর সিনহা হত্যা: কী হবে কারাবন্দি শিক্ষার্থীর দুই

আবু তাহের, কক্সবাজার::

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার পর পুলিশ তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে টেকনাফ থানায়। মাদক আইনে অন্য মামলাটি দায়ের হয়েছে রামু থানায়। পুলিশের এই তিন মামলায় ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রাণী দেবনাথকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ মামলাগুলোর বিষয়ে এখন অনেকটা শিথিল মনোভাব দেখালেও আটক দুই শিক্ষার্থী কারাগারে রয়েছেন।

সিনহা হত্যার পর পুলিশের সাজানো ছক এলোমেলো হয়ে গেলেও তাদের দায়ের করা মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলতে নারাজ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। ফলে কারাবন্দি স্টামফোর্ডের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তাদের পরিবার। কারাবন্দি শিক্ষার্থীদের মুক্তি চেয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তাদের সহপাঠীরা। প্রশ্ন উঠছে, সিফাতের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় অভিযোগ আনায়।
সিনহা প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য ৩ জুলাই কক্সবাজার এসেছিলেন। এই কাজে তার সহযোগী ছিলেন সিফাত, শিপ্রা এবং তাদের সহপাঠী তাহসিন রিফাত নুর। এই তিন শিক্ষার্থী মেধাবী ফটোগ্রাফার হিসেবে ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন। প্রামাণ্যচিত্রের প্রযোজক ছিলেন সিনহা। তারা সবাই উঠেছিলেন হিমছড়ি সৈকত তীরের নীলিমা রিসোর্টে।

গুলিতে সিনহার মৃত্যুর পর পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। দুটি মামলার বাদী এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত। দুটি মামলাতেই একমাত্র আসামি করা হয়েছে সিফাতকে। একটি মামলা করা হয়েছে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। মামলায় বলা হয়েছে, মেজর সিনহা ও সিফাতের গাড়ি থেকে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে। দুটি মামলায় সিফাতকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিনহা হত্যার সময় নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন শিপ্রা ও তাহসিন। ঘটনার কিছু সময় পর পুলিশ ওই রিসোর্টে অভিযান চালায়। পুলিশ সেখান থেকে তাদের আটক করে রামু থানায় নিয়ে যায়। নীলিমা রিসোর্ট রামু থানা এলাকায় হওয়ায় রামু থানার পুলিশ এখানে অভিযান চালায়। থানা থেকে তাহসিনকে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলেও শিপ্রার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। পুলিশ শিপ্রার কক্ষ থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, এক লিটার বাংলা মদ এবং এক পোটলা গাঁজা উদ্ধারের দাবি করেছে মামলায়। তবে পুলিশের এসব ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিপ্রাও এখন কারাগারে রয়েছেন।
তবে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের দাবি করেন, শিপ্রার কক্ষ থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। তাই তাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য এসআই দীপংকর রোয়াজাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা শিপ্রাকে ১০ দিনের রিমান্ডে আদালতে আবেদন জানান। আদালত গত ৫ আগস্ট আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করলেও ওই দিন শুনানি হয়নি। নতুন করে আর কোনো আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়নি।
অন্যদিকে টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলা দুটি নিয়ে পুলিশ এখন তেমন সক্রিয় নয়। মামলা দায়ের করার পর থানার ওসি প্রদীপকে প্রত্যাহার করা হয়। নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এবিএম দোহা। সিফাতের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

পাঠকের মতামত: