কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কুতুবদিয়ায় মহিয়সী মহিলার অসিয়তে ‘কালারমার মসজিদ’

হাছান কুতুবী, কুতুবদিয়া::

কুতুবদিয়ায় প্রায় ৫শ’ বছর আগে মোগল আমলে প্রতিষ্ঠিত ‘কালারমার জামে মসজিদ’। উপজেলা সদর হতে প্রায় ১১ কি.মি. উত্তরে ১নং উত্তর ধূরুং ইউনিয়নে অবস্থিত এ মসজিদটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।

দ্বীপের সবচেয়ে এ প্রাচীন মসজিদ প্রতিষ্ঠাতার নাম, নির্মাণসন ও নামকরণের সঠিক কোন লিখিত ইতিহাস না থাকলেও  জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রায় ৫শ’বছর আগে  গ্রামের এক মহিয়সী মহিলা তাঁর স্বামীকে অসিয়ত করেছিলেন ‘তাঁর মৃত্যুর পর যেন একটি স্মৃতি চিহ্ন স্থাপন করা হয়’। তাঁদের ঔরসে ছিল ‘কালা’ নামের একটিমাত্র পুত্র সন্তান। পরে ওই মহিলার স্বামী তাঁর প্রিয় স্ত্রীর অসিয়তমতে গোল পাতার ছাউনি দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করে এটিকে ‘কালারমার মসজিদ’ নামকরণ করেছিলেন।

দীর্ঘকাল পর ১৮৭৬ সনের দিকে ১৫/২০ ইঞ্চির চওড়া পাকা দেওয়াল ও টিনসেড করে মসজিটি পুনঃনির্মাণ করেন গ্রামের বিশিষ্ট জমিদার মরহুম শেখ মুহম্মদ মনু সিকদার। তাঁর ৩ পুত্র শেখ আজগর আলী সিকদার, শেখ আবদুর রহমান সিকদার ও শেখ আবদুচ ছমদ সিকদার যৌথভাবে ১৯১৬ সনে একটি ওয়াক্ধসঢ়;ফ স্টেট গঠন করে তার অধীনে কুতুবদিয়ার কালারমার জামে মসজিদসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। পরে শেখ আবদুচ ছমদ সিকদারের একমাত্র পুত্র শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী কারুকার্য সজ্জিত করে ১৯৫২ সনে মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন।

মরহুম শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরীর পুত্র মরহুম শেখ রফিক আহমদ চৌধূরী টি.কে ১৯৮০ সনের দিকে অন্যান্য সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ২৩/২৪ বছর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রফিক আহমদ চৌধুরী ১৯৯৮ সনে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর পুত্র বর্তমানসহ তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম.শাহরিয়ার চৌধুরী। তিনি চলতি সনে ওই ছাদের উপর আরো একটি সেমি পাকা টিনসেট ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।

এখানে প্রতি ওয়াক্তে শত শত মুসল্লীসহ জুমাবারে দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রায় ১০/১২ শ’ মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আগত নারীদের নামাজ আদায় ও অন্যান্য এবাদত-বন্দেগি করার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন বহু নারীর সমাগম হয় বলে জানান মসজিদের সহকারী ইমাম মুহাম্মদ ফারুক। এ মসজিদ নিয়ে বহু অলৌকিক ঘটনার কথা শুনা যায় লোকমুখে।

বিশেষত জেলেসহ অন্য পেশাজীবীরা সাগরে বিভিন্ন বিপদের সম্মুখিন হলে এ মসজিদের জন্য মানত করে বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করেন বলে জানা যায়। এতে করে মসজিদটির প্রতি অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা রয়েছে মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের। তাই প্রতিদিন দ্বীপের প্রত্যন্ত এলাকাসহ পাশের উপজেলা  থেকে বহু ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষের সমাগম হয় বলে জানিয়েছেন মসজিদের বর্তমান খতিব অধ্যক্ষ মাওলানা আবু মুছা।পূর্বকোণ

পাঠকের মতামত: