কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কোরবানির কিছু হাদিস ও নির্দেশনা

সুন্নাহর আলোকে কোরবানি। নবিজীর এসব হাদিস কোরবানির নানা বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনা। কোরবানিদাতা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ হাদিসগুলো তুলে ধরা হলো-

১. হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোরবানির ইচ্ছা রাখে সে যেন জিলহজের চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার নখ, চুল ইত্যাদি না কাটে।’ (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান)

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দ্বীন বিষয়ে জানতে এসেছিল। ফিরে যাওয়ার সময় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, ‘আমাকে ইয়াওমুল আজহার আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কোরবানি করার আদেশ করা হয়েছে।) এ দিবসকে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। লোকটি বলল, আমার কাছে যদি শুধু ছেলের দেওয়া একটি দুধের পশু থাকে আমি কি তা-ই কোরবানি করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, বরং তুমি সেদিন তোমার মাথার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করবে) নখ কাটবে, মোচ কাটবে এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ (মুসনাদে আহমদ ইবনে হিব্বান, আবু দাউদ নাসাঈ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার সামর্থ্য আছে তবুও সে কোরবানি করলো না (অর্থাৎ কোরবানি করার সংকল্প তার নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

৪. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন আমরা যেন (কোরবানি পশুর) চোখ ও কান ভালো করে দেখে নিই এবং কান কাটা বা কান ফাড়া ও কানে গোলাকার ছিদ্র করা পশুর দ্বারা কোরবানি না করি ‘ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে খুজায়মা, আবু দাউদ, নাসাঈ)

৫. হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘৪ ধরনের পশুর দ্বারা কোরবানি করা যায় না। যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি অসুস্থ, যে পশু খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণ। (মুয়াত্তা মালেক, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, তিরমিজি)

৬. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানি করার জন্য একটি দুম্বা আনতে বললেন, যার শিং রয়েছে, যার পা কালো, পেটের চামড়া কালো এবং চোখ কালো। এ রকম একটি দুম্বা আনা হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আয়েশা, আমাকে ছুরি দাও। আরো বললেন, একটি পাথরে ঘষে ধারালো করে দাও। তিনি ধারালো করে দিলেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুম্বাটি মাটিতে শায়িত করলেন। এরপর বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করলেন এবং বললেন-

‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মাদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ (মুসলিম, ইবনে হিব্বান, আবু দাউদ)

৭. অন্য হাদিসে এসেছে যে, কোরবানির পশু জবাই করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া পড়েছেন-

بِسْمِ اللهِ اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ، اَللّهُمَّ عَنْ مُحَمَّدٍ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা, আল্লাহুম্মা আন মুহাম্মাদিন।

অর্থ : ‘আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! তোমার কাছ থেকে এবং তোমার উদ্দেশ্যে। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ (তবারানি, মাজমাউয যাওয়াইদ)

দোয়ার উদ্দেশ্য

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথায়-‘হে আল্লাহ! তোমার কাছ থেকে এবং তোমারই উদ্দেশ্যে’ চিন্তা-ভাবনা করলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, কোরবানির হাকীকত কী? আল্লাহ-প্রদত্ত রিজিক এবং আল্লাহর নেয়ামত আমরা পেয়েছি আর আল্লাহর হুকুমে তা কোরবানি রূপে তাঁর দরবারে পেশ করার সৌভাগ্যও পেয়েছি। আবার তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেহমানদারী হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশনা পেয়েছি। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং পূর্ণ একত্ববাদ ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ অনুযায়ী কোরবানি করা কর্তব্য। নামাজ-রোজার মতো কোরবানি ফরজ আমল নয়, তবে অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত কোরবানি করেছেন, কোনো বছর তা বাদ দেননি।

৮. এমনকি তিনি কখনো কখনো কোরবানি করার জন্য সাহাবিদের মধ্যে কোরবানির পশু বণ্টন করেছেন।’ (বুখারি)

৯. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আদেশ করেছেন যেন (ইন্তেকালের পরেও) তাঁর পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয়। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতি বছর নিজের কোরবানির সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকেও কোরবানি করতেন ‘ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)

মনে রাখতে হবে

কোরবানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত উম্মতের মধ্যে এই ইবাদত ‘তাওয়ারুছ’ ও ‘তাওয়াতুরে’র সঙ্গে চলমান রয়েছে। আর প্রতিবছরই তা ‘শিয়ার’রূপে (ইসলামের একটি প্রকাশ্য ও সম্মিলিতভাবে আদায়যোগ্য ইবাদত হিসেবে) আদায় করা হচ্ছে। সুতরাং কেউ যদি মনে করে যে, কোরবানি ইবাদত নয় এবং ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত নয়; তবে সে সুস্পষ্ট ইসলামি শরিয়তকে অস্বীকারকারী।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাহর আলোকে কোরবানি করার এবং নবিজী দেওয়া উপদেশ ও দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত: