কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

গৃহকর্মী, দারোয়ান ও শ্রমিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের রাখছে স্থানীয়রা

মাহাবুবুর রহমান :
বাসার গৃহকর্মী হিসেবে ও প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান বা শ্রমিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের রাখছে স্থানীয়রা। এতে সহজেই স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছে তারা। এমনকি দীর্ঘ পরিচয় সূত্রে অনেক নি¤œ আয়ের মানুষ রোহিঙ্গাদের সাথে বিয়ে বন্ধনেও আবন্ধ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শহরের কিছু আবাসিক এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তির বাসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের প্রত্যেকের গৃহকর্মী রোহিঙ্গা, এমনকি বাসার দারোয়ানটিও রোহিঙ্গা। অথচ তারা মাঝে-মধ্যে রোহিঙ্গা বিরোধী সমাবেশে কড়া বক্তব্য দেয়। তাদের কথায় প্রায় উঠে আসে রোহিঙ্গা বিরোধী বক্তব্য রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধ প্রতিবাদের কথা। এই অবস্থা শুধু কিছু এলাকার নয় ভাল করে জরিপ চালালে দেখা যাবে অনেকের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসবে।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক প্রিয়তোষ পাল পিন্টু বলেন, ‘মানুষের নিজের ভেতরে যে দোষ আছে সেটা না করতে অন্যকে উপদেশ দেওয়া ঠিকনা। আসলে রোহিঙ্গাদের স্থানীয়রা আশ্রয় প্রশ্রয় না দিলে কোন দিন তারা এত বেপরোয়া হতে পারতো না।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ আলোচিত টেকনাফের হাকিম ডাকাত, আমিজেনেছি স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের হাত ধরেই সেই রোহিঙ্গা ডাকাতের উত্থান। এবং এখনো প্রশ্রয় দিচ্ছে সেই নেতা। আর এটা সত্য, কম পারিশ্রমিকের আশায় এবং স্থায়ীত্বের কথা চিন্তা করে সমাজের অনেক দায়িত্বশীল মানুষ রোহিঙ্গাদের বাড়ির কাজের মেয়ে বা দারোয়ান সহ ঘরের কাজের লোক হিসাবে ব্যবহার করেন। এটা মোটেও উচিত না, কারন সেই স্থানীয় ব্যাক্তির প্রভাবে সেই রোহিঙ্গা কিছুদিন পর এখানে স্থায়ী হয়ে যায় সে আর ক্যাম্পে ফিরতে চায়না।
টেকপাড়া জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মৌলানা মোজ্জাম্মেল হক বলেন, এলাকার ঈমাম হিসাবে অনেক মানুষের বাসা বাড়িতে আমাদের যাওয়া আসা হয় তখন দেখি অনেক সম্মানী মানুষের বাসার কাজের মেয়েটি কিন্তু রোহিঙ্গা। দেখা গেছে, সে অনেক বছর ধরে এই বাড়িতে কাজ করছে, আবার অনেকের বাড়ির কাজের লোক বা দারোয়ান সহ অনেক কর্মচারী কিন্তু রোহিঙ্গা যারা অনেক বছর আগে এসেছে বর্তমানে তাদের রোহিঙ্গার কোন পরিচয় নেই বরং তারা পাকাপোক্ত স্থানীয় হয়ে গেছে। অনেক সময় দেখা গেছে, ছোট বেলা থেকে যে বাড়িতে কাজ করছিল তারা দেখে শুনে একটি স্থানীয় ছেলের সাথে রোহিঙ্গা মেয়ের বিয়ে দিয়েছে এতে সেই রোহিঙ্গা স্থায়ী ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
উখিয়ার সুজন সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার ও রাজনীতিবিদ সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘উখিয়া টেকনাফের বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি এমনকি প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বাসাবাড়িতেই কাজের মেয়েরা রোহিঙ্গা এবং ঘরের কাজের ছেলেটিও রোহিঙ্গা। এমনও তথ্য আছে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঢাকা চট্টগ্রামে থাকা তাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য রোহিঙ্গা মেয়েদের বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য পাঠিয়েছে। তাদের দাবী, উখিয়া টেকনাফের বেশির ভাগ খাবার হোটেল আবাসিক হোটেলে কর্মরতদের ৯৫% রোহিঙ্গা। এটা শতভাগ সত্য যে ঘরে বাইরে রোহিঙ্গাদের কাছথেকে সুবিধা নিয়ে আবার তারাই রাস্তায় যে কোন অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। তবে এটাও ঠিক স্থানীয়রা আজকাল শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে চায়না। আর কাজ করলেও বেশি পারিশ্রমিক চায়। সে ক্ষেত্রে কম টাকায় রোহিঙ্গাদের পাওয়া যায় তাই মানুষ তাদের ব্যবহার করে।’
এ ব্যপারে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি মুখে যেটা বলবো সেটা ঘরে বাইরে বাস্তবরুপ দিতে হবে তাহলেই সে প্রকৃত সৎ মানুষ। রোহিঙ্গাদের স্থানীয় মানুষরা আশ্রয় প্রশ্রয় না দিলে কোন ভাবেই তারা বাইরে আসতে পারেনা। একটু কষ্ট হলেও বেশি টাকা গেলে স্থানীয়দের চাকরী বা বাসাবাড়ির কাজে ব্যবহার করা দরকার কোন ভাবেই যেন রোহিঙ্গারা তাদের নির্ধারিত স্থান থেকে অন্যকোন কাজে সুযোগ না পায় সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’ সুত্র:দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত: