কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সরিয়ে নিতে নির্দেশ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক নারীকে (৩৬) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে তা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শমীম এই আদেশ দেন। তবে এ বিষয়ে মূল আদেশ দেয়ার জন্য বেলা ২টার পর সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত।

গতকাল রোববার দুপুর থেকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। জানা গেছে, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়া ও টাকাও দাবি করে না পেয়ে ঘটনার ওই ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ঘটনার প্রধান বাদল ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ ছাড়া তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকাও দাবি করে বাদল ও দেলোয়াররা। এভাবে একমাস ধরে ভয় দেখাতে থাকে তারা। যে কারণে তিনি নিজের বসত বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকার আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে যান। তারপরই নির্যাতনের ওই ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করে দেয় অভিযুক্তরা।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকের এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গতকাল রোববার বেগমগঞ্জ থানায় মামলা দুটি করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন বাদল ও দেলোয়ারসহ অন্যান্যরা তার স্বামীকে বেঁধে রেখেছিলেন। তারা ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা তারা ভিডিও ধারণ করে। গত এক মাস ধরে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে অনৈতিক প্রস্তাবও দিচ্ছিল উল্লিখিত আসামিরা। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেয় তারা।

এদিকে বেগমগঞ্জের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১)। অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দেলোয়ারকে। গতকাল রোববার গ্রেপ্তার হয় আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহ নামে অপর দুই আসামি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বাদল ও দেলোয়ারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম। সকালে তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আমাদের কাছে খবর আসে, জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। ওই খবরে র‌্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। মধ্যরাতে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এলাকা থেকে এবং ভোরে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

দুপুরে নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এরপর আসামিদের সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।

এ ছাড়া আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিইশ্চত করেন বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী। তিনি বলেন, গতকাল রোববার বিকেলে আবদুর রহিম রাত ১০টার দিকে রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পাঠকের মতামত: