কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘুমধুম ইউনিয়ন বিট পুলিশিং সভায়

সামাজিক নিরাপত্তায় পুলিশ-জনগণ এক কাতারে : ওসি আলমগীর

শ.ম.গফুর, উখিয়া::

“বিট পুলিশিং বাড়ি-বাড়ি,নিরাপদ সমাজ গড়ি”এ শ্লোগানে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে কার্যক্রম শুরু করেছে।এ উপলক্ষ্যে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বিট পুলিশিং কার্যালয়ও উদ্ধোধন করা হয়।

১৬ অক্টোবর( শুক্রবার) বিকেল তিনটায় ইউনিয়ন পরিষদ হলকক্ষে এক আলোচনা ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ওসি তদন্ত)মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে পুলিশের এএসআই শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোঃ আলমগীর হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওসি আলমগীর হোসেন বলেছেন,সামাজিক নিরাপত্তা দানে পুলিশ-জনগণ পাশাপাশি আসল।পুলিশের কাছে গিয়ে আইনী সেবা পেতে যেতে হবেনা।পুলিশই আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আইনী সেবা দেবে। ব্যক্তি,পরিবার ও সামাজিক নিরাপত্তাদানে সদা সজাগ থাকবে পুলিশ। বাড়ি টু বাড়ি গিয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।বাড়ির কোন ছেলে পিতা-মাতা অবাধ্য হয়ে মাদকে জড়াচ্ছে কিনা।

জনবিরোধী, সমাজ বিরোধী কিংবা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজে জড়াচ্ছে কিনা? বখে যাওয়া ছেলেদের কারণে পরিবার তথা সমাজে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা বা অনাচার সৃষ্টি হচ্ছে কিনা? এসব থেকে উত্তরণে পরিবারের পিতা-মাতা এবং সামাজিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।নারী নির্যাতন,বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতন বেড়ে গেছে।

স্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে আত্নহত্যা, কিংবা সংসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।অনেক নারী স্বামী কে তালাক দিয়ে মুক্তি চাই।এসুযোগে স্বামীরা আরও কয়েকটি বিয়ে করে বসে।এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ হয়নি।ফের শুরু হবে মাদক নির্মুল অভিযান।সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে তথ্য দিয়ে পুলিশ কে সহযোগিতা করবেন।,আমরাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সংসদ সদস্য প্রতিনিধি আলহাজ্ব খাইরুল বশর বলেছেন,বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি।আজকে মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,যাবে।তারই সুফল ইউনিয়ন ভিত্তিক বিট পুলিশিং ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।স্বাধীনতাযুদ্ধ পূর্ববর্তী বাঙালির পুকুর ভরা মাছ,গোয়াল ভরা গরু,গোলা ভরা ধান ছিল, পাকিস্তানিরা কেড়ে নিয়েছিল।স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত সরকার পরিচালনায় আবারো সম্পদে ভরে উঠছে।এসব আল্লাহর রহমত।

তিনি আরো বলেছেন,ঘুমধুম ইউনিয়ন মাদকের সাম্রাজে পরিণত হয়েছে।যার বিড়ি খাওয়ার টাকা ছিলনা,তাঁরা বেনসন সিগারেট টানছে।করেছে গাড়ী,বাড়ি,অনেকেই বহুনারী বিয়ে করছে।তাদের আয়ের উৎস কোথায়? ইয়াবায় তাদের এমন পরিবর্তন এনেছে।তাদের কারণে সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে।মাদকের কলংক থেকে ঘুমধুম ইউনিয়ন কে রক্ষা করতে পুলিশের সাহসি ভুমিকা কামনা করেন খাইরুল বশর।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান বলেছেন,ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় গত ৪/৫ বছরে বড়-বড় দালান বাড়ি হয়েছে।যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা যেসব পরিবারে ছিল,তারাই কোটি-কোটি টাকার বাড়ি গাড়ী অর্থ সম্পদের মালিক বনেছেন। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে আহবান জানিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি।তাদের আয়ের উৎস কোথায়? তা খোঁজে বের করতে হবে।এসব সম্পদ অর্জনের পিছনে যে ইয়াবা, মাদক কিংবা চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত তাঁর প্রমাণ মেলে।চেয়ারম্যান অভিলম্বে ঘুমধুম ইউনিয়নের মাদক কারবারিদের নতুন তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ওসি(তদন্ত) মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন,”মুজিব শত বর্ষের অঙ্গিকার,পুলিশ হবে জনতার”এ শ্লোগান দিয়ে বলেছেন,ঘুমধুম ইউনিয়ন ইয়াবা,তরল মাদক ও চোরাচালান প্রবণ এলাকা।সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ঘুমধুম দিয়ে চোরাচালান হওয়ার খবর পুরনো নয়।মাদক সন্ত্রাস,অপরাধ ও মাদকমুক্ত এলাকা হিসেবে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে গড়ে তুলতে চাই।তাই এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাধ্যমে সঠিক তথ্য চাই।তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন, আমরাই (পুলিশ) সুন্দর একটি অপরাধমুক্ত ইউনিয়ন উপহার দিতে চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব রাজা মিয়া।অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন এস আই মোখলেসুর রহমান,এসআই মোঃইউনুস,ঘুমধুম ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন,ঘুমধুম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য লক্ষীকান্ত বড়ুয়া, ডাক্তার শাহজাহান,তরুণ নেতা এম.ছৈয়দ আলম,ঘুমধুম ইউপির নারী সদস্য খালেদা বেগম,আনোয়ারা বেগম,পুরুষ সদস্য বাবুল কান্তি চাকমা,আনোয়ারুল ইসলাম,দিল মোহাম্মদ ভুট্রো,আবুল কালাম,শফিকুল ইসলাম, বদিউল আলম,মোহাম্মদ আলম,সাবেক মেম্বার সুবত বড়ুয়া,ব্যবসায়ী হায়দার আলী,বঙ্গবন্ধু আওয়ামী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা এড.তারেক আজিজি জামী,যুবনেতা শফিউল আলম,সাংবাদিক শ.ম.গফুর প্রমুখ।

আলোচনা পরবর্তী ফিতা কেটে বিট পুলিশিং কার্যালয় উদ্ধোধন করেন প্রধান অতিথি নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোঃআলমগীর হোসেন।বিট পুলিশিং কার্যালয়ে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ টু,পুলিশের উপপরিদর্শক জীবন চৌধুরী, সহকারী ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক রবিউল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনীপেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: