কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ৬৮১ বছর ধরে দ্বীনের প্রদীপ জ্বলছে শাহ ওমরের (র.) খানকাহ মসজিদে

জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া::

পুরো কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের বেশ কিছু অংশ নিয়ে ছিল ‘চকরিয়া’। এখানে তখন বিভিন্ন জাত গোত্রের মানুষ থাকলেও মুসলিমদের আগমন ঘটে নবম শতাব্দী থেকে। কিন্তু ওই সময়ে ইসলাম ধর্ম প্রচারে কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল কিনা ইতিহাসবিদদের কোন গ্রন্থে উল্লেখ নেই। তবে সূফি সাধকদের মধ্যে শাহ ওমর (র.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে শাহ্ধসঢ়; জালালের (র.) সাথে সিলেট আসেন। পরে ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে ফখরউদ্দিন মোবারক শাহ কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ের প্রাক্কালে চট্টগ্রাম বিজয়ে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন শাহ ওমর (র.)। তিনি চট্টগ্রাম আসার পথে কিছুদিন নোয়াখালী অবস্থান করেছিলেন।

অল্পদিনের মধ্যেই শাহ ওমর সাধক হিসেবে প্রখ্যাত হয়ে উঠেন। তার প্রভাবে বহু অমুসলিম ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। পরপরই শাহ ওমর চকরিয়ার কাকারায় এসে খানকাহ গড়ে তোলেন। এই খানকায় দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি সালাত কায়েম করা হতো। তবে ওই সময় আগত শাহ ওমর (র.) ফরাসি ভাষাভাষীর হওয়ায় সালাতকে নামাজ হিসেবে প্রচার করা হয়। সেই হিসেবে চকরিয়ায় খানকাহ’র মাধ্যমে সালাত আদায়ের মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয় এখন থেকে ৬৮১ বছর পূর্বে (১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে)।

এখানেই শাহ ওমর ইন্তেকাল করলে খানকাহ মসজিদের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয় শাহ ওমরের (র.) মাজার শরীফ। বর্তমানে ওই মাজার লাগোয়া মসজিদ ও নিকটেই চারটি পুকুর এবং কবরস্থানসহ নানা গাছগাছালি রয়েছে বনঘেষা প্রায় ৬০ একর পাহাড়ি জমিতে। এখানেই ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে কাকারা নিবাসী শাহ এশারাত উল্লাহ শাহ ওমর (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে ইসলামী শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকা- শুরু করেন।

ইতিহাসবিদদের মতে, মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী মানিকপুরে ১৮৯০ সালে ফজলুল রহমান সিকদার কিউক কর্তৃক নির্মিত তিন গম্বুজের কিউকের মসজিদটি চকরিয়ার প্রথম মসজিদ হিসেবে প্রচারণায় আনা হয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক নানা রচনাবলিতে মুসলিম ও সূফি সাধকদের আগমন, অবস্থান ও ইসলাম শিক্ষা প্রচার-প্রসার ও সালাত কায়েম করতে খানকাহ্; নির্মাণ হিসেবে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয় ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে।

বাগদাদ কেন্দ্রীক বৃহত্তর ভারতে বণিক সেজে ব্যবসার সাথে নৌপথে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসা সূফি সাধকরা ছিলেন ফার্সি ভাষাভাষীর। তাই ধর্ম প্রচারেও ধর্মীয় অনেক প্রচলিত শব্দ ফার্সিতেই প্রচার পায়। চকরিয়ায় মুসলিম আগমনের ইতিহাসে শাহ ওমর ও এতদঞ্চলে তাঁর আগমন চকরিয়াবাসীর কাছে ছিল স্বর্গীয় আশীর্বাদ। তিনিই চকরিয়ায় সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিক ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ভীত স্থাপন করে চকরিয়াকে ইসলামের আলোই আলোকিত করে তোলেন।

এই আলো ছড়ানোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাকারায় শাহ ওমরের প্রতিষ্ঠিত খানকাহ। সরেজমিন শাহ ওমর (র.) এর মাজারে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ পূণ্যের আশায় মাজারে এসেছে। ওই সময় মাজারের সামনে বৈঠকখানায় খাদেমের দায়িত্বে ছিলেন মনজুরুল আলম মনজুর। মসজিদে ছিলেন ইমাম হাফেজ জিয়াবুল হক। তারা দু’জনই পূর্বকোণকে বলেন, এই মাজারে মসজিদ কখন প্রতিষ্ঠা হয়েছে আমরা জানি না। খাদেম মনজুর বলেন, বংশ পরম্পরায় আমাদের পারিবারিক পুরুষ সদস্যরা খাদেমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

পাঠকের মতামত: