কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ছাত্রলীগ: ১১১ জেলা ইউনিটে মেয়াদোত্তীর্ণই ১০৮

২০১১ সালের ৯ জুলাই হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমনকে সভাপতি এবং মো. আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন। একইদিন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিরও অনুমোদন দেয়া হয়। ওই দুটি কমিটি গঠনের পরে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও ইউনিট দুটির সম্মেলন কিংবা নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক বছর মেয়াদি দুটি জেলা ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৮ বছর আগেই। শুধু এ দুটি ইউনিট নয়, কেন্দ্রসহ প্রায় সবগুলো ইউনিট কমিটির মেয়াদ পার হয়েছে। ফলে কমিটি জটের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর মেয়াদী কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির কথা থাকলেও সেই প্রক্রিয়ার দেখা এখনো মেলেনি। এছাড়া সংগঠনটির অধিকাংশ জেলা ইউনিটের মেয়াদ ফুরিয়েছে। নিয়মিত জেলা সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারায় বলা আছে, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন করে নতুন কমিটি করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বর্ধিত সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কমিটির মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো যাবে।’

সেই অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকারিতা লোপ পেয়েছে। আর গঠনতন্ত্রের ১০(খ) ধরায় বলা আছে, জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। জেলা শাখাকে উপরিউক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই দুই বছর মেয়াদী বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। তবে অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী এক নম্বর সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। কয়েক মাস ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পরে তারা পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পান। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদও শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩১ জুলাই।

জয়-লেখক দায়িত্ব পাওয়ার পর ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে আশার জোয়ার সৃষ্টি হলেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছাত্রলীগের ১১১টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে ১০৮টি কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে পাঁচটি ইউনিটের সম্মেলন করলেও তার কোনো কমিটি দিতে পারেনি। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন না হওয়ায় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে সংগঠনটিতে।

এদিকে সঠিক সময়ে কমিটি গঠন না হওয়ায় সংগঠনের অভ্যন্তরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, সময়মত কমিটি না হওয়ার কারণে তৃণমূলে নেতৃত্ব সংকটের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান আরিফ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জেলা কমিটি সময় মত না হওয়ার কারণে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটিগুলো দিয়ে দিতে পারলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।

‘নিউ নরমাল’ সময়ে জেলা ইউনিটের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই কমিটি গঠন শুরু করি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা আবারো কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতিমধ্যে মেডিকেল ৫টি মেডিকেল ইউনিট এবং কক্সবাজার জেলা কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিডি জার্নাল

পাঠকের মতামত: