কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জীবন বদলাতে বিশুদ্ধ তওবা

জীবন চলার পথে মানুষ ছোট-বড় নানা রকম দোষত্রুটি করে থাকে। ত্রুটিহীন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। পার্থিব জীবনের লোভ-লালসায় এ স্খলন আসে। কেউ জেনে কেউ না জেনে, কেউ বুঝে আবার কেউ না বুঝে গুনাহ করে থাকে। তবে কোনো মুমিন গুনাহে অটল অবিচল থাকতে পারে না। বিবেকবোধ, দায়বদ্ধতা ও বিচার দিবসের ভয় তাকে প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় রাখে।

গুনাহের কারণে দুনিয়া-আখেরাতে প্রত্যেককেই শাস্তি পেতে হবে। ছোট ছোট গুনাহ করতে করতে এক সময় অনেক বড় গুনাহ করে থাকি অথচ আমরা তা গুনাহই মনে করি না। গুনাহ করতে করতে ইবাদতে মন বসে না। ফলে একনিষ্ঠভাবে রবের চরণে মস্তক অবনত করেও হৃদয় গহিনে প্রশান্তি খুঁজে পাই না। যদি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে সরল সঠিক পথ অনুসরণের দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণ করি তবে আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি ইরশাদ করেন, ‘আর আমি অবশ্যই ক্ষমাকারী তার জন্য, যে তওবা করে, ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়।’ (সূরা ত্বাহা, আয়াত : ৮২)।

একজন গুনাহগার যখন দয়াময় রবের কাছে তওবার হাত উঠায়, তখন আল্লাহতায়ালা অত্যধিক খুশি হন।

হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহতায়ালা তার বান্দার তওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭০৯)।

আল্লাহতায়লা যাদের ভালোবাসেন, তাদের অন্যতম তওবাকারী।

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২২২)।

একজন ইবাদতকারী বান্দা অতীত জীবনের ভুল ত্রুটি ও বিভীষিকাময় হিসাব দিবসের ভয়কে স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আমলে মগ্ন হলে সেই আমল কম হলেও মিলবে দয়াময়ের মমতাময়ী ক্ষমা ও জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত।
আল্লাহতায়লা মুমিন বান্দাদের তওবার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘হে ইমানদাররা তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, খাঁটি তওবা।’ (সূরা তাহরিম, আয়াত : ০৮)।

হজরত খলিফা আলী (রা.) বলেন, তওবা হলো ছয়টি বিষয়ের সমষ্টি।

১. নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

২. ছুটে যাওয়া ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতগুলো আদায় করা।

৩. অন্যের সম্পত্তি-অধিকার নষ্ট করে থাকলে, তা ফেরত দেওয়া।

৪. শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে, ক্ষমা চাওয়া।

৫. ভবিষ্যতে পাপকাজ পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্প করা।

৬. আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা।

সুতরাং আমরা যদি যথাযথ তওবা করতে পারি, অতীতের সব পাপাচার ছেড়ে সত্য ও সুন্দরের পথে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি তাহলেই কেবল সম্ভব পার্থিব জীবনে অপার্থিব সুখ লাভ।

অধিকহারে তওবা এবং গুনাহমুক্ত জীবনই হোক আমাদের অঙ্গিকার। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত: