কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানছে না হোটেল মালিকরা, বিপাকে পর্যটক

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

সাত দিনব্যাপী মেলা উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে আবাসিক হোটেলগুলোতে ৩০-৭০ শতাংশ এবং রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এই অফার পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন কক্সবাজারে। তার জেলা প্রশাসনের এই ঘোষণা মানছে না হোটেল মালিকরা। এতে বিপাকে পড়েছেন কক্সবাজারে আসা পর্যটকরা।

জানা যায়, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে পর্যটন কক্সবাজারে লাবনী পয়েন্টে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। ২৭ সেপ্টেম্বর এ মেলার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

মেলা উপলক্ষ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসে ৩০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, সব রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, কিটকট চেয়ার প্রতি ঘণ্টায় ২০ টাকা (মেলাব্যাপী) ফটোগ্রাফারের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি ২ টাকা (মেলাব্যাপী) ওয়াটার বাইক/জেটস্কি রাইড/বিচবাইক ২০ শতাংশ, প্যারাসেইলিংয়ে ৩০ শতাংশ, টিউব ভাড়ায় ৩০ শতাংশ ছাড়, চাঁদের গাড়ি রাইড ও লকারে ৫০ শতাংশ এবং গাড়ি পার্কিংয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।

তবে বুধবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছার পর হোটেল বুকিং দিতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি। ছাড় তো দূরের কথা নরমাল মৌসুমের চেয়ে বেশি হোটেলের ভাড়া দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেস্তোরাঁগুলোতে তর্ক জড়িয়ে প্রশাসনকে অবগত করেও কোনো ছাড় পাচ্ছেন না পর্যটকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল ও রেস্তারাঁয় ডিসকাউন্ট দেওয়ায় অল্প খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ করা যাবে মনে করে পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে ঢাকার মিরপুর-৩ থেকে কক্সবাজারে এসেছেন জামাল হোসেন নামে একজন কাপড় ব্যবসায়ী।

জামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কক্সবাজারে অন্তত ২০টি হোটেল ঘুরেও আমি ছাড় পাইনি। বরং স্বাভাবিক সময় কক্সবাজারে ১ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে ভালো হোটেল রুম পাওয়া যেত, এবার এসে মনে হয়েছে তার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। রেস্তোরাঁগুলোতে রীতিমতো ডাকাতি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন বা হোটেল মালিক যারাই ছাড়ের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধ মামলা করা উচিত।

সিলেট থেকে আগত আবুল কালাম নামে এক পর্যটক বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছে বিভিন্ন হোটেল গেছি। কিন্তু পর্যটক মেলা উপলক্ষ্যে যে ডিসকাউন্ট (ছাড়) দেওয়ার কথা ছিল বাস্তবে তা নেই। আগে তাদের যে রেট ছিল বর্তমানেও একই অবস্থা, যা পর্যটকদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। একই ধরনের অভিযোগ করছেন সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অংখ্য পর্যটক।

হোটেল-মোটেল জোন ও রেস্তোরাঁগুলোতে ঘুরে পর্যটকদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জেলা প্রশাসনের ঘোষণা মতে, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না। এ কারণে কক্সবাজারে আগত পর্যটক জেলা প্রশাসনের ঘোষণা মতো হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ছাড় না পেয়ে প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

তবে হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ীদের দাবি, জেলা প্রশাসন হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের সঙ্গে আলাপ না করে নিজেদের মতো ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছেন। এ কারণে পর্যটকরা প্রতারিত হচ্ছেন। এর দায় তারা নেবে না, জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।

ঘোষণার পরও পর্যটকদের ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক টুটুল বলেন, মুলত আমাদের কারও সঙ্গে আলাপ না করে জেলা প্রশাসন রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে। গণমাধ্যম প্রচার করেছে। তাই এর দায় জেলা প্রশাসনকেই নিতে হবে।

কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আমরা উৎসবের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এরপরও মেলা উপলক্ষ্যে আমাদের সমিতির মালিকানাধীন নন-এসি রুমগুলো মেলা চলাকালে ৮০০ টাকা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনো পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি।

তবে হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটন মৌসুম ছাড়া সারা বছরই নন-এসি রুমের ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন তারা। এখনো তাই নিচ্ছেন। বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি তারা জানেন না।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্দেশ চৌধুরী খোকা বলেন, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ছাড়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেনি। এখন জেলা প্রশাসন যদি নিজেদের মতো করে ঘোষণা করে থাকে, সেটি তাদের বিষয়।

পর্যটকদের অভিযোগ উল্লেখ করে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান এ বিষয়ে যথাযথ জবাব দেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সমন্বয় করে ছাড়ের বিষয়টি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এখন কেন এমন করছেন (অস্বীকার) তার জানা নেই।

পাঠকের মতামত: