কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুহা

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের নয়াপাড়া-শালবাগান রোহিঙ্গা শিবির লাগোয়া দুর্গম পাহাড়গুলো আর অক্ষত নেই। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ওই পাহাড়গুলোতেও কোদাল, খুন্তি আর বেলচার আঘাত হেনেছে। সেখানে তারা সুনিপুণ হাতে তৈরি করেছে গুহা। এসব গুহাই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ রকম একটি গুহা আবিষ্কার করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা। সেখান থেকে উদ্ধার করে সাত-আট ফুট লম্বা ধারালো কিরিচসহ দেশীয় অস্ত্র।

স্থানীয় লোকজন জানায়, দুর্গম পাহাড়ে এ রকম অর্ধশতাধিক গুহা রয়েছে। সন্ত্রাসী সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের এক ডজনেরও বেশি গ্রুপের ডেরা এসব গুহা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল এই গুহাগুলোতে অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। এগুলো মিয়ানমার থেকে আনা ইয়াবা ও মাদকের ডিপো হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃতদের আটকও রাখা হয় সেখানে।

রোহিঙ্গা শিবিরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন-১৬-এর সদস্যরা বৃহস্পতিবার অপহৃত দুই রোহিঙ্গাকে উদ্ধারে পাহাড়ে গিয়ে আকস্মিকভাবে গুহাটি দেখতে পান। এপিবিএন-১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক তারিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপাড়া নিবন্ধিত শিবির ও জাদিমুরা শিবির থেকে এক দিনে দুই রোহিঙ্গা অপহৃত হন।

সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারাই ওই দুই রোহিঙ্গাকে অপহরণের পর পাহাড়ে তাদের ডেরায় নিয়ে যায়—এমন সংবাদ পেয়ে এপিবিএন-১৬ ড্রোন নিয়ে পাহাড়ে অভিযানে নামেন। দুই রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের পাশাপাশি দুই অপহরণকারীকে আটক করেন তাঁরা। এক পর্যায়ে এপিবিএন সদস্যরা পাহাড়ে ওই গুহাটি দেখতে পান।

টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে রয়েছে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা। পাহাড়েই রয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ। তাদের ভয়ে সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় পা ফেলি না।’ ওই সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের হাতে তিনটি ওয়ার্ডের ১০ থেকে ১৫ হাজার বাসিন্দা এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পাহাড়ের গুহায় গুহায় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অবস্থান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের চোখে চোখে রেখেই তারা অপরাধ কর্মকাণ্ড সমানে চালিয়ে যাচ্ছে।

ওই ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি স্থানীয় বাসিন্দা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। কারণে-অকারণে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মোবাইলে আমাকে হুমকি দেয়।’ তিনি জানান, শালবাগান-নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবির এলাকাসংলগ্ন দুর্গম পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের এক ডজনেরও বেশি সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। একেকটি গ্রুপে ২০ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী থাকে।

সাইফুল ইসলাম জানান, উঁচু পাহাড়গুলোতে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী গুহা রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালালে সন্ত্রাসীরা গুহার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এ কারণে সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ে না। তাঁর মতে, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, মুক্তিপণের দাবিতে যত্রতত্র অপহরণের ঘটনা। প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দেরও অপহরণ করা হয়।

প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দেরও অপহরণ করা হয়। অতি সম্প্রতি এক প্রবাসী স্থানীয় বাসিন্দাকে অপহরণের পর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ২৬ লাখ টাকা আদায় করেছে বলে জানান সাইফুল। এপিবিএন সদস্যরা পাহাড়ি গুহার সন্ধান পাওয়ায় এবার সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ধরা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: