কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ডাক্তারের হাতে-পায়ে ধরেও চিকিৎসা মেলেনি প্রসূতির, অবশেষে মৃত্যু

প্রসবব্যথা নিয়ে একে একে চার হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে সুজিনা বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুজিনা বেগম জেলার উলিপুর উপজেলার মিয়াজীপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্ব অবহেলায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসছে।

সুজিনার স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় সুজিনার প্রসবব্যথা শুরু হয়। রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে তিনি উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের দেখা পাননি। রাত ৯টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক চিকিৎসক স্থানীয় আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালে রোগীকে পাঠিয়ে দেন। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৭০০ টাকার বিনিময়ে সুজিনাকে ভর্তি নেন।

ওই গৃহবধূর স্বামী জানান, পরে সিজারিয়ান অপারেশনের কথা বলে ওষুধ কিনতে বলা হয়। কিন্তু আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তির পর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসক আসেননি। এ অবস্থায় রোগীর শারীরিক অবনতি হলে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের লোকজন ৮০০ টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগীকে পাশের বেসরকারি ক্লিনিক গ্রিন লাইফ জেনারেল হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসক। সেখানে ২ হাজার ৩৫০ টাকা দিয়ে রোগীকে ভর্তি করে সিজারিয়ান অপারেশনের কথা বলে ওষুধ কেনেন নার্স। পরে চিকিৎসক না থাকায় রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হয়। সন্ধ্যায় সেখান থেকে রোগীকে আবারও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘দ্বিতীয় দফায় কুড়িগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পর সুজিনাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই আমার স্ত্রী মারা যায়। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল; এভাবে চার হাসপাতাল ঘুরলাম। ডাক্তার-নার্সের হাতে-পায়ে ধরলাম। তবুও আমার স্ত্রীকে চিকিৎসা দেয়নি। আমি গরিব মানুষ। অনেক টাকা খরচ করলাম। তবুও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার আট বছরের একটা শিশু সন্তান এতিম হয়ে গেল। আমি আমার স্ত্রী হত্যার বিচার চাই।’

সুজিনার খালা আমিনা বেগম দাবি করেন, রোগীকে দ্বিতীয়বার যখন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন ডাক্তার তাকে ইনজেকশন দেন। এরপরই ডাক্তার জানান রোগী মারা গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমনটি হওয়ার কথা নয়।’

আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক এরশাদুল হক চাঁদ বলেন, ‘রোগীকে হাসপাতারে ভর্তির পর প্রেসার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খিঁচুনি শুরু হয়। এ অবস্থায় আমাদের এখানে সিজারিয়ান অপারেশন করা সম্ভব ছিল না। এজন্য রোগীকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রেদওয়ান ফেরদৌস সজিব বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। সূত্র: আমাদেরসময়

পাঠকের মতামত: