কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

তিনদিনে ভারতে গেল ১৯৮ মেট্রিকটন ইলিশ

কথায় বলে ‘মাছে ভাতে বাঙালী’। মাছ ছাড়া বাঙালির চলে না। আর বাঙালির পাতে যদি একটু নদীর রূপালী ফসল না পড়ে তাহলে কি আর চলে? তবে এবার ইলিশ প্রিয় ভোজনরসিক ভারতের বাঙালীদের জন্য রয়েছে সুখবর। ভাদ্রের শেষ লগ্নে শারদোৎসবের আগে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পদ্মার ইলিশ পৌঁছে গেছে ওপার বাংলায়। যার ফলে এবার দুর্গা পুজোয় বাঙালি বাড়িতে বাড়িতে জমে উঠবে পদ্মার ইলিশের জমজমাট নানা পদের রান্নায়।

তবে নিজেদের তরকারিতে ভারতের পেঁয়াজের স্বাদ নিতে পারছে না এদেশের মানুষ। পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এদেশে পেঁয়াজ রফতানি। সেদিকে কারো লক্ষ্য না থাকলেও দাদাদের জন্য ইলিশ রফতানি যে করতেই হবে। ভারতে ইলিশ রফতানির আগে প্রকারভেদে ৫‘শ থেকে ৭‘শ টাকা কেজিতে ইলিশ পাওয়া গেলেও এখন সেটা ৭‘শ থেকে ৯‘শ টাকায় দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ইলিশ নিয়েও ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে।

এ নিয়ে দু’দেশের ব্যবসায়ীসহ জনসাধারনের মনে হাজারো প্রশ্ন। অনেকে বলছেন- ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সাথে সাথে বাংলাদেশ যদি ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দিত, তাহলে কিছুটা হলেও পেঁয়াজ রফতানির সমস্যাটা থাকতো না।

কাস্টমস ও বন্দর সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ৯৩ দশমিক ৬ মেট্রিকটন ইলিশের চালান কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। এর আগে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ৪১ দশমিক ৩ মেট্রিকটন ও মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ৬৩ মেট্রিকটন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়। এনিয়ে আসন্ন পূজা উপলক্ষে প্রতিশ্রুত ১ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন ইলিশের মধ্যে গত তিনদিনে ১৯৭ দশমিক ৯ মেট্রিকটন ইলিশ মাছ রফতানি হয়েছে ভারতে।

বুধবার ইলিশের চালানটির রফতানিকারক ছিলেন ঢাকার রিপা এন্টারপ্রাইজ ও খুলনার জাহানাবাদ সি ফিশ লিমিটেড। প্রতিকেজি ইলিশের রফতানি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ আট’শ টাকা। এই দরে রফতানি করা প্রতিটি ইলিশের সাইজ ছিল এক কেজি থেকে ১২’শ গ্রাম ওজনের।

মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ও বেনাপোলের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার নয়জন রফতানিকারককে মোট এক হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন ইলিশ ভারতে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। প্রতিকেজি ১০ মার্কিন ডলার দরে মোট ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ইলিশ মাছ ভারতে রফতানি করা হবে।

বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শামিম হোসেন জানান, প্রতি কেজি ১০ ডলার মূল্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় এ ইলিশ ভারতে রফতানি হচ্ছে।

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সাত বছর। সম্পর্কের বরফ গলে দুই দেশের। এরপর ২০১৯ সালে বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো উপলক্ষে ৫০০ টন ইলিশ পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। আবার এক বছর পর ফের বেনাপাল-পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে পশ্চিম বাংলায় গেল বাঙালির পছন্দের পদ্মার ইলিশ।

বর্তমান সরকার এক হাজার ৪৭৫ টন ইলিশ মাছ ভারতে রফতানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী, আগামী মাসের ১০ অক্টোবরের মধ্যে বাকি ইলিশ রফতানি করা হবে। ভারতে এই ইলিশ পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে চলে যাবে শিয়ালদহ, হাওড়া, পাতিপুকুর বাজারসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বাজারগুলোতে। ৫০০ থেকে এক কেজি ও ১২’শ গ্রাম ওজনের ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। ভারতের পাইকারি বাজারে যেগুলোর দাম প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা।

পাঠকের মতামত: