কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

তিন মাসের রিজার্ভই যথেষ্ট: প্রধানমন্ত্রী

 

বাংলাদেশের রিজার্ভ দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, এ নিয়ে অনেকে নানা ধরনের গল্পগুজব করছে। কিন্তু যে রিজার্ভ আছে, সেটি যথেষ্ট।

প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক মুদ্রা বাড়াতে রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়ানো, পাশাপাশি প্রবাসী আয় দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ করা, হুন্ডির বদলে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেল বাড়ানোর কথাও বলেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তিনি চট্টগ্রামে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজিরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে ভোগ কমানো, দেশে উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের সবসময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, পরনির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে। আমাদের নিজেরে পায়ে নিজেরা যাতে দাঁড়াতে পারি সেই ব্যবস্থাটাই করতে হবে।’

করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দর বেড়ে যাওয়ার মধ্যে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালামাটাল। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। পণ্য ও জ্বালানি মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কমেছে অনেকটাই। দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তা নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কিছু লোক আছে এটা নিয়ে অনেক নানা ধরনের গল্প গুজব এটা সেটা করে বেড়ায়। আমি মনে করি আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার যে রিজার্ভ সেটা থাকলেই যথেষ্ট।’

অনুষ্ঠানে জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দেশের জন্য জনশক্তির প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখের কিছু উপরে। সেই ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের ৩৮ শতাংশ হচ্ছে যুব সমাজ। কাজেই আমাদের এই যুবশক্তিটা আমরা শুধু বিদেশে প্রেরণ করব, এই চিন্তা করলে হবে না। আমরা দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানে আমাদের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন আছে। কাজেই আমরা প্রশিক্ষণ দেবে, তারা বিদেশে যেমন কাজ করবে আবার দেশেও তারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় সেটা ব্যবস্থা নিতে হবে।’

রিজার্ভ কমা নিয়ে স্পষ্টতই মানুষের মধ্যে উদ্বেগ স্পষ্ট। ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনও ঘটছে অস্বাভাবিক হারে।

কয়েক মাসের মধ্যে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে খোলাবাজারে দাম উঠেছে ১১২ টাকা। এমনকি ব্যাংকগুলো বিক্রি করছে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায়।

রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিতে জোর

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বৈদেশির মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর ওপরও জোর দেন। তিনি কেবল রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল না হয়ে রপ্তানিতে জোর দিতে চান।

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল না হয়ে আমাদের পণ্য যাতে বিদেশে রপ্তানি হয়, তাই পণ্য বহুমুখীকরণ করা এবং পণ্যের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

‘নতুন নতুন বাজারে কোন কোন পণ্যের কী কী চাহিদা আছে সেই ধরনের পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করে প্রেরণ করতে হবে। সেখান থেকে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। অর্থ্যাৎ রপ্তানি নির্ভর আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিকে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। সেদিকে আমি অনুরোধ করব, সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’

বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠানো আরও সহজ করার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি জানি অনেক জায়গায় তারা কাজ, করে কিন্তু সেখানে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকের সুবিধা তারা পায় না যে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাবে। তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির উপর। এর উপর আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, কিছু এজেন্ট আছে তারা নানাভাবে মানুষকে উসকায়। ব্যাংকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তাতে তাদের লাভ হয়।’

খাদ্য বা কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর জোর দেয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য অর্থ্যাৎ খাদ্যপণ্য, এটার উপর আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিজের দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে। শুধু পণ্য উৎপাদন না সেই সঙ্গে পণ্য সংরক্ষণেও আধুনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই খাদ্যপণ্য বা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য শিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে। এতে নিজেরে দেশে যেমন মার্কেট তৈরি হবে আবার বিদেশেও যেন আমরা তা রপ্তানি করতে পারি।’

দালালের খপ্পরে বিদেশে নয়

যুব সমাজকে দাদালদের প্ররোচনায় বিদেশে না যাওয়ার আহ্বানও জানান সরকার প্রধান। বলেন, ‘কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে যাবেন না। বিদেশে যেতে গেলে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন, প্রয়োজন ক্ষেত্রে বিনা জামানতেও ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা আছে, যাতে জমি জমা বিক্রি না হয়, সম্পত্তি বিক্রি না হয়। তাই দয়া করে এই ধরনের কোনো প্ররোচনায় পড়বেন না।’

তিনি বলেন, ‘এক শ্রেণির দালাল আছে সারা বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে তারা আমাদের বিভিন্ন কর্মীদেরকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। বিভিন্ন পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করে বাইরে পাঠালে এত টাকা হবে, এই হবে সেই হবে; সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়।

‘আর সেটা দেখতে যেয়ে জমি জমা বিক্রি করে একটা অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা করে তখন পড়ে বিপদে। সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকেই তাদের উদ্ধার করতে হয় অথবা ওই ভুমধ্যসাগরে নিজেদের সলিল সমাধি হয়, এটা হচ্ছে দুভার্গ্যজনক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে যাবেন না। বিদেশে যেতে গেলে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন, প্রয়োজনক্ষেত্রে বিনা জামানতেও ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা আছে, যাতে জমি জমা বিক্রি না হয়, সম্পত্তি বিক্রি না হয়।’

দক্ষ কর্মী পাঠানোর জন্য প্রশিক্ষণেও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ না নিয়ে বিদেশে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়।

আওয়ামী লীগের সরকারের সাড়ে ১৩ বছরে ৫৫ টি দেশে নতুন শ্রমবাজার তৈরি হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মনিরুছ সালেহীন।

পাঠকের মতামত: