কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

তিন যুগের শাপমুক্তি

হোক না নব্বই মিনিটের গল্প, তবু সে-গল্প জীবনেরই ঘাম-রক্তের। এই গল্পটাকেই তো বহু দিন মেসি-ডি মারিয়ারা লিখে চলেছেন অতুলনীয় দক্ষতায়। ক্লাবের জার্সি গয়েছে দারুণ দক্ষতায় বদলে দিয়েছেন কত গল্পের প্লট, নাম-ঠিকানা। তবুও সে গল্পে অতৃপ্তি ছিল। জাতীয় দলের জার্সিতে বিশ্বকাপ না পাওয়া হাহাকার যে মিটছিল না কিছুতেই। ১৯৮৬ থেকে ২০২২। ৩৬ বছর। এই ৩৬ বছরে পারানা নদীতে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। এক কোপা ছাড়া আর কোনও বলার মতো গল্প ছিল না। বিশ্বকাপ এলেই যেন মেসিদের পৃথিবীটা দুলতে শুরু করতো। অবশেষে মন্দা, ক্ষুধা, মহামারিতে অহরহ ঘুরপাক খাওয়া পৃথিবীটায় আচমকা নামলো আকাশী নীল- সাদা বসন্ত। ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। ফরাসিদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। মেসির জোড়া গোলে তিন যুগের শাপমুক্তি। মেসির হাতে উঠলো কাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ। আর হ্যাটট্রিক করেও ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই রইলেন এমবাপ্পে।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেরা ফাইনাল। গোটা ম্যাচ জুড়ে বার বার বদলাল খেলার রঙ। সত্যিই যেন মেসি বনাম এমবাপ্পের যুদ্ধ। তাতে ব্যক্তিগত অর্জনে হেরেছেন মেসি, করেছেন জোড়া গোল। এমবাপ্পের করেছেন হ্যাট্রিক। অতিরিক্ত সময়ের ৩-৩ শেষে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকার। কিন্তু শেষ হাসি আর্জেন্টিনার। চ্যাম্পিয়ন মেসির দল।

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৮০ মিনিটে ২-০ এগিয়ে আর্জেন্টিনা।  ‍বিশ্বকাপের মঞ্চে লাস্ট ডান্সে সমহিমায় উদ্ভাসিত মেসি-ডি মারিয়া। আর তাদের যোগ্য সঙ্গ দিলেন হুলিয়ান আলভারেজ, ডি পল, এমি মার্টিনেজ, এঞ্জো ফার্নান্দেজরা।

কিন্তু ফ্রান্সের তো একজন এমবাপ্পে ছিলেন। ৮০ থেকে ৮২ মিনিট, দুই মিনিটের ঝড়। দুই মিনিটের ঝড়ে দুটি গোল করলেন এমবাপ্পে। ৭৮ মিনিটে ফ্রান্সের আক্রমণের সময় বক্সের মধ্যে হাঁটু দিয়ে কোলো মুয়ানিকে মারেন ওটামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপ্পে। পরের মুহূর্তেই আবার আক্রমণ করে ফ্রান্স। ডান দিক থেকে এমবাপ্পেকে লম্বা বল বাড়িয়েছিলেন কোমান। দ্রুত পাস খেলে মাটিতে পড়ে যেতে যেতে অনবদ্য শটে গোল করলেন এমবাপ্পে। ২-২ গোলে সমতা।

ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ১০৮ মিনিট। দুরন্ত আক্রমণে গোল দিলেন মেসি। লাউতারো মার্টিনেজের শট দারুণ ভাবে বাঁচিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। ফিরতি বল মেসির হাঁটুতে লেগে গোলে ঢুকে গেল। বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল মেসির।

কিন্তু ওই যে ফ্রান্সের একজন এমবাপ্পে আছেন। ম্যাচের ১১৮ মিনিট। এমবাপ্পের শট আটকাতে গিয়ে বক্সের মধ্যেই বল হাতে লাগালেন মন্তিয়েল। পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। ৩-৩ গোলে সমতা। হ্যাট্রিক এমবাপ্পের। বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথম। অতিরিক্ত সময় শেষেও স্কোরলাইন ৩-৩।

ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। বাজপাখি মার্টিনেজ ঠেকিয়ে দেন একটি শট। সেখানে ৪-২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

মেসি-মারিয়ারা হয়তো পরের বিশ্বকাপে আর থাকবেন না। তবে একটা উদাহরণ রেখে গেলেন জীবনের মঞ্চে। দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে যে নীরবিন্দুর দেখা মেলে, সেই বিশ্বাস আরও গাঢ় করে তুললেন। নশ্বর পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা হাতে-গোনা।

পাঠকের মতামত: