কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

দালালদের টার্গেট রোহিঙ্গা সুন্দরী যুবতী

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ
শীত মৌসুমে গভীর বঙ্গোপসাগর শান্ত থাকে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানব পাচারে জড়িত দালালরা তাদের অপকর্ম চালানোর জন্য ফের সক্রিয় হচ্ছে। সাগর শান্ত থাকায় দালালরা নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে এমন আশংকা কঠোর হস্তে প্রতিরোধ করার জন্য স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপকুলীয় এলাকা গুলোতে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়,
উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছে পাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যরা।
তারা প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ ভাবে সাগরপথে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে আগ্রহী করে তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
এর আগেও একাধিক সময় টেকনাফ সাগর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার চলছিল। তবে সেসময় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশী মানুষের সংখ্যাও ছিল চোঁখে পড়ার মত। পাশাপাশি পাচার কাজে লিপ্ত ছিল স্থানীয় কথিপয় চিহ্নিত দালাল চক্র। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা সাগর পথে ঝুঁকি নিয়ে আর মালয়েশিয়া যেতে চাই না। তাই মানব পাচারে জড়িত দালালরা এবার টার্গেট করেছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে।
সর্বশেষ গত ১৪ নভেন্বর টেকনাফ উপকুলীয় ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে ১২২ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে কোস্টগার্ড। উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের মধ্য বেশীর ভাগ নারী ও শিশু। জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা দালালদের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন।
উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারী রহিমা বেগম বলেন, মালয়েশিয়াতে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। দুই পরিবার মিলে আমাকে স্বামীর কাছে পাঠানোর জন্য ট্রলারে তুলে দিয়েছেন। আমাকে বলা হয়েছিল জাহাজে করে নেয়া হবে,কিন্তু এখানে এসে দেখি ঝুঁকিপুর্ন কাঠের ট্রলারে করে পাঠানো হবে।
তথ্য সুত্রে দেখা যায়, গত কয়েক মাসের মধ্যে সাগর পথে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় এ পর্যন্ত প্রায় ৭শত জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা সবাই রোহিঙ্গা
ক্যাম্পে বসবাসরত বাসিন্দা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তথ্য নিয়ে জানা যায়,সাগর পথে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাদের মধ্যে রোহিঙ্গা সুন্দরী যুবতীদের সংখ্যা বেশি। মালয়েশিয়া অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সাথে বিয়ে দিতে দালালরা সুন্দরী যুবতীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাচার করছেন। এছাড়া অনেক বিবাহিত নারীও তাদের শিশু সন্তানসহ সেখানে স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য দালালদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।
হ্নীলা নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নাজির হোসন মত প্রকাশ করে বলেন,আগে স্থানীয় দালালদের সহযোগীতায় অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী
পাসপোর্ট তৈরী করে বাংলাদেশী সেজে আকাশপথে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে রোহিঙ্গারা যেন কোন পাসপোর্ট করতে না পারে সেই বিষয়ে সরকার কঠোর নজরদারী বৃদ্ধি করেছে। তার কারনে অবৈধ ভাবে সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে রাজি হচ্ছে তারা।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ক্যাম্পে মালয়েশিয়া পাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দালালরা প্রথমে কম টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার কথা বললেও পরে মাঝপথে গিয়ে স্বজনদের কাছে পৌঁছানোর আগে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে দালালরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের পথ বেচে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া মানব পাচারে সক্রিয় ভাবে জড়িত রোহিঙ্গা দালাল চক্র। তাদের সাথে এই অপকর্মে স্থানীয় কিছু অর্থলোভী অসাধু ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে।
এদিকে শীত মৌসুমে সাগর
অনেকটা শান্ত থাকে, তাই সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরা সাগরপথে মানব পাচার করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে। র‌্যাব-১৫ টেকনাফ শাখার কর্তব্যরত কোম্পানী কমান্ডার লেঃ মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, মানব পাচারে জড়িত দালালরা এবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাচার করার জন্য এবার নতুন করে টার্গেট রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদেরকে।
সাগরপথে মানব পাচারের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই অপতৎপরতা রোধ করতে এবং পাচারকারী দালালদের আইনের আওয়তাই নিয়ে আসতে র‌্যাবের নজরদারী আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। অবৈধ পথে মানবপাচার ঠেকানোর জন্য র‌্যাব সদস্যরা সর্তক রয়েছে। স্থানীয়রা সজাগ থাকলে এই ঘৃর্ন্য অপকর্ম প্রতিরোধ করতে আমরা আরো বেশী সক্ষম হবো।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম অভিমত প্রকাশ করে বলেন,
এর আগেও সাগর পথে মানবপাচারের ঘটনায় এখনো মুছে যায়নি অত্র এলাকার বদনাম। সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক লোক গভীর সাগরে ট্রলার দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। তাই টেকনাফ উপকুল ব্যবহার করে অবৈধ মানব পাচারের কোন ঘটনা যেন আর ঘটতে না পারে সে দিকটা বিবেচনা করে উপকুলীয় এলাকার স্থানীয় জনগনকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মানব পাচারে জড়িত দালাল চক্রের অপকর্ম চোঁখে পড়ার সাথে সাথে অপরাধীদের আটক করার জন্য তথ্য দিয়ে আইন-শৃংখলা বাহীনিকে সহযোগীতা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।###

পাঠকের মতামত: