কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

দেশে বেড়েছে ধর্ষণ-নির্যাতন

ক্যান্সারের চিকিৎসা আছে, ধর্ষণের নেই কেন?

দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়েছে। গেলো নয় মাসে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬২ আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২০৮ জন নারী। ১৬১ জন নারী হয়েছেন যৌন হয়রানির শিকার। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষ নিহত হয়েছেন।

গেলো ২ অক্টোবর আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে এই পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।

সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের জন্য অপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে মদদ দেয়া ও মহামারির মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ দমনে শিথিলতাকেই দায়ী করছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিই অপরাধীকে বেপরোয়া করে তুলছে।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ধর্ষণের মতো অপরাধের ভয়াবহতা নিয়ে পাঠ্যক্রম মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সর্বশেষ দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারী। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। এসময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।

এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় টিলায় ঘেরা এমসি কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় ঘুরতে গেলে পাঁচ-ছয়জন যুবক ওই তরুণীকে ঘিরে ধরে। ওই তরুণ-তরুণী স্বামী-স্ত্রী কি না এমন প্রশ্ন তুলে ওই যুবকরা প্রথমে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে।

তারপর বলপ্রয়োগ করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষের সামনে ওই তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষসহ সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, এমসি কলেজের ঘটনার দুইদিন আগে গেলো বুধবার খাগড়াছড়িতে এক বাড়িতে ঢুকে প্রতিবন্ধী পাহাড়ি তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ বা যৌননিপীড়নের ঘটনায় প্রায়শই কেবল প্রতিষ্ঠান বা ছাত্র সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা শোনা যায়। কিন্তু এসব সহিংসতা ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই বাদী হয়ে মামলা করা উচিত। একইসঙ্গে সমতলে কি পাহাড়ে সব ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজ থেকে এ প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু।

ধর্ষণকে সমাজের দেহে ক্যান্সারের মত ‘মারাত্মক একটি ব্যাধি’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যান্সারেরও তো চিকিৎসা আছে, তাহলে ধর্ষণের থাকবে না কেন? এ ধরনের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা মেনে নেয়া যায় না।

প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে চললেও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এই সাংবাদিক বলেন, বিচার না হলে অপরাধীরা সাহস পায়। সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করতে হবে, যেন আর একটাও এমন ঘটনা না ঘটে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করতে হবে।

নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন বলা হয়, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ। তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়। এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনও সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন। তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে।

পাঠকের মতামত: