কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ধুনটে বকচর মেলায় ৪০ কেজির বাঘা আইড়

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় কালের পাড়া ইউনিয়নের হেউট নগর (কোদলা পাড়া) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বচর মেলায় মানুষের উপচে পরা ঢল। দূর দূরান্ত থেকে দল বেঁধে লোকজন মেলায় ছুটে আসছেন। মেলা উপলক্ষে আশপাশের ২০ থেকে ৩০ গ্রামে রীতিমতো চলছে উৎসবের আমেজ।

গৃহস্থ ঘরে এসেছে নববধূ আর মেয়ে জামাই আর অতিথি। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় অন্যবারের মতো এবারও মেলায় উঠেছে নদীতে ধরা হরেক প্রজাতির মাছ। এবারের মেলায় ৪০ কেজি ওজনের একটি বাগা আইড় দাম হাঁকা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। কালেরপড়া ইউয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার রাকিবুল ইসলাম মাছটি ৭০ হাজার টাকায় ক্রয় করে।

বুধবার সকালে ঐতিহ্যবাহী বকচর মেলার দৃশ্য ছিল এমনটাই। প্রায দুই শো বছর ধরে হেউট  নগর (কোদলা পাড়া)বাষিক বচর মেলা টি বসে। নদীতে ধরা বিশাল আকৃতির মাছ ছাড়াও এবারের মেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল ১০ কেজি ওজনের রসে ভাষা ‘বালিশ মিষ্টি’।

 

হেউট নগর (কোদলা পাড়া) গ্রামের আজিজার রহমান  সাকিদার জানান কবে থেকে মেলা শুরু হয়েছিল তা সঠিক করে বলা মুশকিল। তবে লোকজনের ধারণা, প্রায় দুইশবছর আগে থেকে  প্রতিবছরের মাঘ মাসের কোন এক বুধবারে মেলা টি বসে। মেলায়,বাঙালি নদী আর যমুনা নদীর বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। প্রায় একশে একর জমির ওপর বসা একদিনের এই মেলা হয়ে উঠেছে এখন এই অঞ্চলের মানুষের মিলনমেলা হেউটনগর (কোদলা পাড়া)গ্রামের শাহিনুর রহমান  বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে নববধূরা নাইওর আসেন শ্বশুরবাড়ীতে। বাবার বাড়ীতে নাওয়ার আসেন মেয়ে-জামাই। একদিন আগে থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারদিকে। ২০থেকে ৩০গ্রামজুড়ে উৎসব আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। মেলা উপলক্ষে আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত খাওয়ানো এখন এই এলাকার মানুষের সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে।

বুধবার সকালে মেলার আশপাশের গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেওয়াজ অনুযায়ী এবারও মেলা উপলক্ষে ঘরে ঘরে মেয়ে-জামাই, আত্মীয়-স্বজন নিমন্ত্রণে এসেছেন।

মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, এবারও উঠেছে নদীর বাগাআইর, পাঙাস, চিতল, কাতল, সিলভার কার্পসহ বড় বড় মাছ।
মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল  মেলায় বিক্রি করতে এনেছেন ৪০ কেজি ওজন একটি বাঘা আইড়। তিনি মাছটির দাম হাঁকছেন এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। ক্রেতা চাঁন মিয়া  দিতে চান এক লাখ। আব্দুল জলিল ব্যবসায়ী  তাতেও রাজি হয়নি। তিনি বলেন, ‘অন্যবার এ মেলায় বড় মাছের কদর ছিল বেশি, এবার ছোট মাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

শেরপুর উপজেলা থেকে মেলা দেখতে এসেছেন যাদু শিল্পী এম আর মোখলেছুর রহমান । তিনি বলেন, ‘মেলার অনেক নামডাক শুনেছি। এবার ফ্যামিলি নিয়ে দেখতে এসেছি। বড় মাছ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।’
১০ কেজি ওজনের ‘বালিশ মিষ্টি’ মেলায় । এবারও উঠেছে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের বড় বড় মিষ্টি। ঘন রসে ভাসা এ মিষ্টির স্থানীয় নাম ‘বালিশ মিষ্টি’। মিষ্টি ব্যবসায়ী আবুল  মিয়া জানান এই মেলার আকর্ষণ বড় মিষ্টি। এই মিষ্টি বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিকেজি দুশ টাকা। কিন্তু এবার মেলায় লোক সমাগম কম হওয়ায় বড় মিষ্টির ক্রেতাও কম।’

সকাল থেকেই শিশু কিশোরদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল এই মেলা। শিশুরা নাগরদোলায় চড়ে, হরেক খেলনা আর রঙিন বেলুন কিনে আনন্দ করে। মেলায় উঠেছিল আসবাব ও গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী, মসলাসহ হরেক পণ্যের পসরা।

পাঠকের মতামত: