কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পটিয়ায় ছেলের গুলিতে মা খুন: র‍্যাবের হাতে ছেলে গ্রেপ্তার

শাহেদ হোছাইন মুবিন:

পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা প্রয়াত সামশুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে (৫০) গুলি করে হত্যার ঘটনায় ছেলে মাঈনুদ্দীন মো. মাইনু (২৯) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৭।

বুধবার (১৭ আগস্ট ২০২২) রাতে চট্টগ্রাম নগরী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করেছে র‍্যাব।

বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, পারিবারিক কলহ ও টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধের জেরে মাঈনু তার মাকে খুন করে বসেন।

 

র‌্যাব অধিনায়ক ইউসুফের ভাষ্য, “মাকে খুন করার পরও মাঈনুদ্দীনের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, খুন করার পর মাঈনু নিজেকে বাঁচাতে প্রথমে মোবাইল ফোনটি কোথাও ফেলে দেন। তারপর পরিচিত এক ‘বড় ভাইয়ের’ মাধ্যমে সাতকানিয়ায় একটি কারখানায় আত্মগোপন করেন। ঢাকায় পালানোর জন্য বুধবার বিকালে সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে একটি বাসে ওঠেন মাঈনু। বাসের টিকেট না পেলেও সুপারভাইজারকে টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় রওনা হন। শাহ আমানত সেতু এলাকায় ওই বাস থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক ইউসুফ বলেন, “মাঈনু উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির হওয়ায় প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টার তার সম্পত্তি ছেলেকে না দিয়ে স্ত্রী ও মেয়ের নামে দিয়ে গেছেন। গত ১৩ জুলাই শাসমুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়।“

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে মাঈনু র‌্যাবকে বলেছেন, ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন জেসমিন। সেটা জানার পর মাঈনুর ধারণা হয়, তাকে বাদ দিয়ে তার মা ও বোন ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন এবং সম্পত্তি বিক্রি করে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছেন।

“এরপর দুপুরে মাঈনু তার ঘরে গিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধায়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পিস্তল বের করে বোনের দিকে গুলি ছোঁড়েন। সেটা তার শরীরে না লাগায় মাকে গুলি করে বসেন মাঈনু,” বলেন র‍্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ।

 

র‌্যাব জানায়, প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।এর আগে ২০১৭ সালে ‘শোধরানোর’ জন্য মাঈনুকেও বোনের কাছে পাঠিয়েছিলেন তার বাবা মা। কিন্তু সেখানে এক বছর থেকে দেশে ফিরে আসে মাঈনু।

 

র‌্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, “মাঈনু উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবেরে ও নেশাগ্রস্থ হওয়ায় এবং পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হওয়ায় জীবদ্দশায় শামসুল আলম মাস্টারও তার প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী জেসমিনও মেয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। মাস কয়েক আগে জেসমিন ও তার মেয়ে দেশে ফেরেন।“

গ্রেপ্তারের পর মাঈনুকে নিয়ে র‍্যাব অভিযানে গিয়ে সাতকানিয়া এলাকার একটি গুদাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাঈনু জানিয়েছে, ওই পিস্তলটি তার বাবার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। পিস্তলটির বৈধতা আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গ্রেফতার মাঈনুদ্দীন মো. মাইনু কে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন বলে জানান েএই কর্মকর্তা।

এদিকে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে সামশুল আলমের স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও মেয়ে শায়লা শারমিন ব্যাংক থেকে সামশুলের রেখে যাওয়া টাকা তুলতে গেলে মাঈনুদ্দীন ক্ষুব্ধ হন। এ সময় মাঈনুদ্দীন প্রথমে বোন শায়লাকে গুলি করেন এবং পরে মা জেসমিনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। প্রথম গুলিটি ফসকে গেলেও দ্বিতীয় গুলিটি জেসমিনের চোখের নিচে লাগে। পরে মাঈনুদ্দীন সেখান থেকে সটকে পড়েন।

গুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয় লোকজন জেসমিন আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাকে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য:যে,মঙ্গলবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে জেসমিন আক্তারকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে মাঈনুদ্দীন পলাতক ছিলেন।এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে শায়লা শারমিন বাদী হয়ে ভাই মাঈনুদ্দীনকে আসামি করে পটিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

 

 

পাঠকের মতামত: