কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা দিয়ে পোশাক রপ্তানি শুরু

 

পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর এর সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। প্রথমবারের মতো এই সেতু দিয়ে কনটেইনারে করে আসা ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই বন্দর থেকে ঢাকার ২৭টি কারখানার তৈরি বিভিন্ন পোশাক নিয়ে পোল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ মার্কস নেসনা। এর আগে ২৫ জুলাই বন্দর জেটিতে আসে বিদেশি জাহাজটি।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বন্দর দিয়ে বিদেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি নতুন এক মাইলফলক বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং এজেন্টরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন দেশের অন্যতম বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হয় দক্ষিণাঞ্চল।

সেতুটি চালুর পর রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর এখন বাগেরহাটের এই বন্দর। সড়ক পথে যেখানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার, সেখানে এখন মোংলার দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার।

দেশের বড় অবকাঠামো চালুর পর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছিল, পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততা বাড়বে কয়েক গুণ। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানিতে।

বিষয়টি মাথায় রেখে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

বন্দরে ছয়টি জেটি, তিনটি মুরিং বয়া, ২২টি অ্যাংকোরেজ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের জেটির মাধ্যমে মোট ৪২টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।

চারটি ট্রানজিট শেড, দুটি ওয়্যার হাউস, চারটি কনটেইনার ইয়ার্ড, দুটি কার ইয়ার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক এক কোটি মেট্রিক টন কার্গো এবং এক লাখ টিইউজ কনটেইনার এবং ২০ হাজারটি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে বন্দরে।

জাহাজ হ্যান্ডলিং দ্রুত ও নিরাপদ হওয়া এবং একই সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমায় ব্যবসায়ীদের এখন সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হবে। ফলে মোংলা বন্দরের দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা।

সিঅ্যান্ডএফ ও শিপিং এজেন্ট সৈয়দ জাহিদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে জাহাজের চাপের কারণে অনেক সময় পণ্য খালাস বা বোঝাইয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়। তবে মোংলা বন্দরে সেই চাপ নেই। এই গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পর আরও অনেকে এই বন্দর দিয়ে রপ্তানিতে আগ্রহী হবেন।’

মোংলা বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর দিয়ে প্রথমবার গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এর আগে হাতে গোনা কয়েকবার অল্প কিছু গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে মোংলা দিয়ে। এই রপ্তানির মাধ্যমে একটা নতুন যাত্রা শুরু হলো।’

গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে জাহাজের এই যাত্রা মোংলা বন্দরের জন্য একটি নতুন মাইলফলক বলে মনে করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়কপথে ঢাকা থেকে মোংলা বন্দর হয়ে প্রথম গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১৭টি কনটেইনারে ৩৪ টিইউজ গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে জাহাজটি পোল্যান্ড যাবে।’

ভবিষ্যতে আমদানি-রপ্তানির এই ধারা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা পোষণ করে তিনি আরও বলেন, ‘মোংলা বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।’

পাঠকের মতামত: