কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার সৈকত

সফিউল আলম, কক্সবাজার::

বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখা এবং থার্টি ফাস্ট নাইট, বর্ষ বরণ-বর্ষ বিদায় উদযাপনের জন্য পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন লাখো পর্যটক। অনেকে ছুটি নিয়ে পরিবার পরিজনসহ আবার অনেকে একা এবং বন্ধু বান্ধব নিয়ে দল বেধে এসেছেন। সাগরের নীল জলরাশির ছোঁয়া পেতে সবারই আগ্রহ সমান। সৈকতে গোসল, ছুটাছুটি আর ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটাচ্ছেন ভ্রমণ পর্যটকরা। অনেকে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বিচরণ করছেন সবাই।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে এ সব চিত্র দেখা যায়। এদিকে পর্যটক আসায় মহা খুশি হোটেল মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা।

অপরদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, ইনানী ও হিমছড়ি সৈকত, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মহেশখালী, সোনাদিয়াসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতেও বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। এতে লাভবান হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

কলাতলীর হোটেল গ্রান্ডবিচ এর জেনারেল ম্যানেজার সওকত ওসমান জানান, করোনার কারণে পর্যটন এলাকা গত ১৭ আগস্ট খুলে দেয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই ভ্রমণ পিপাসুরা কক্সবাজার ছুটে আসছেন। নানা দিবস ও সরকারি ছুটিতে টানা বুকিংও হয়েছে। বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার।

তিনি বলেন, অনেকে এসেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। অনেকে এসেছেন একা। পর্যটকের উল্লাসে কক্সবাজার মুখরিত হলে ব্যবসায়ীরাও স্বস্থি পান। বিচ’র কীটকট থেকে শুরু করে হোটেল মালিক পর্যন্ত সকল স্থরের ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। আমরা হোটেল মালিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি এবং পর্যটকদের মানতে সহযোগিতা করি।

সুগন্ধা বিচ ক্ষুদ্র খাদ্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি: সভাপতি মো. রহিম উল্লাহ জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমাদের ব্যবসার খুব ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু পর্যটন ব্যবসা খুলে দেয়ার পর থেকে আমাদের ব্যবসা আগের মতই চলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা করোনাকালীন যে ক্ষতি হয়েছে তা পুশিয়ে নিতে পারব। আমরা পর্যকদের কল্যাণের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকি। দোকানে আসলে আমরা মুখে মাস্ক আছে কিনা দেখি না থাকলে আমরা নিজেরা পর্যটকদের ফ্রি তে মাস্ক দিয়ে থাকি।স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাদের অবগত করি। জেলা প্রশাসন আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা পালন করি।

কক্সবাজারের স্বপ্নচুড়া ট্যুরিজমের মালিক মনির জানান, পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানীর পাথুরে সৈকত, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতেও ঘুরছেন। যাচ্ছেন সেন্টমার্টিনেও। সেন্টমার্টিনগামী চারটি জাহাজের টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। বিশেষ বিষেশ দিবসে এ রকমই হয়।

কক্সবাজার হোটল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন মূখপাত্র আবুতালেব শাহ জেনান, কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে রয়েছে। এগুলোতে একত্রে লক্ষাধিক পর্যটকের সঙ্কুলান সম্ভব।

‘সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায়ে লাখো পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। শতভাগ বুকিংয়ে জমজমাট ব্যবসা করছে তারকা হোটেলসহ ছোট বড় সব হোটেল মোটেল।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্খিত হয়রানির শিকার রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশে পুরুষ-নারী পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বিচ বাইক নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকতে পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শংকার মাঝেও বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা রোধের পাশাপাশি পর্যটনটাও এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। সেভাবেই পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। সবাই আন্তরিক হলে পর্যটন ব্যবসা ঠিক রেখে করোনা রোধ সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

পাঠকের মতামত: