কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার এক বছর

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড: পাঁচ কোটি টাকায় মূলহোতার নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার::

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আরসা নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মর জনুনীর নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য থাকার পরও পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট থেকে আতার নাম বাদ দিয়েছেন। উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাহ উদ্দিন ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন। তবে মূলহোতা আতার নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয় শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)’ সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হন। এআরএসপিএইচের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। পরদিন তার ছোটভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ বছর ১১ সেপ্টেম্বর ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মধ্যদিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। আসামিদের মধ্যে ১৪ জন কারাগারে। বাকি ১৫ জন পলাতক। মামলার তদন্ত করে পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন ১৩ জুন আদালতে চার্জশিট জমা দেন। ১৬৪ ধারায় আদালতে আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে কথিত আরসা আমির আতাউল্লাহর নির্দেশে মুহিবুল্লাকে হত্যার তথ্য উঠে এসেছে। আতার নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাহ উদ্দিন তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও চট্টগ্রামে আতার অস্থায়ী ঠিকানা রয়েছে।

আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকসহ আতার ভাই শাহ আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১৪ এপিবিএন)। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আতার সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন। শাহ আলী কারাগারে রয়েছেন। উখিয়ার কুতুপালং ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১০ ব্লক এবং চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজারের জয়নব কলোনিতে আতার বসবাস। তার বাবার নাম গোলাম মোহাম্মদ। তার নামে উখিয়া ও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।

সূত্র জানায়, মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় আতাউল্লাহ আসামি হলে আন্তর্জাতিকভাবে আরসা আস্থার সংকটে পড়তে পারে। সংগঠনটিও নিষিদ্ধ হতে পারে। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাঠানোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব আশঙ্কায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একাধিক সূত্রে দাবি-পাঁচ কোটি টাকার বিনিময় আতাউল্লাহকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাহ উদ্দিন। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম ও সৌদি আরবের মক্কা নগরীর নাক্কাসায় গাজী সালাহের প্রতিনিধিরা এ টাকা নিয়েছেন।

নাম-ঠিকানা ও সব তথ্য থাকার পরও আরসা নেতা আতাউল্লাহর নাম কিভাবে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি যেমন পেয়েছি, তেমনি দিয়েছি। অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে তিনি বলেন, পাঁচ কোটি টাকা তো দূরের কথা ‘এক কাপ চা’ও কারও কাছ থেকে খাইনি।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. আলি বলেন, উখিয়া থানায় আমি যোগ দেওয়ার আগে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে এতটুকু বলতে পারি-খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে এবং নাম-ঠিকানা সব ঠিক থাকলে কোনোভাবেই তদন্ত কর্মকর্তা আসামির নাম বাদ দিতে পারেন না। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়টা বলতে পারব না। তবে তদন্তে আরসা নেতা আতাউল্লাহর নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ সূত্র : যুগান্তর

পাঠকের মতামত: