কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি কয়েক দশকে সর্বোচ্চ’

 

ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান চলছে। ক্রেমলিন দাবি করছে, রুশ সামরিক অভিযান পরিকল্পনামাফিকই চলছে। তবে ইউক্রেনের দাবি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে রুশ সেনারা। এদিকে পূর্ব ইউক্রেনে বৃদ্ধি পেয়েছে লড়াইয়ের তীব্রতা।

এমন পরিস্থিতিতে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) বলছে, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের ফলে বিশ্বব্যাপী যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তা স্নায়ুযুদ্ধের ৩৫ বছর ধরে কমতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা আগামী কয়েক দশকে আবার বৃদ্ধি করবে।

সোমবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসআইপিআরআই বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন বিশ্বের ৯টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনটি বলছে, স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো আগামী বছরগুলোতে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়বে।

এসআইপিআরআইয়ের ডিরেক্টর ড্যান স্মিথ বলেছেন, যদিও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পারমাণবিক অস্ত্র অপসারণের ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য এসেছিল, স্নায়ুযুদ্ধের পর বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

জানুয়ারি ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২-এর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সামান্য কমলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বে পারমাণবিক ওয়ারহেড সংখ্যা বাড়বে।

স্টকহোমভিত্তিক এই পিস রিসার্চের গণবিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচির পরিচালক উইলফ্রেড ওয়ান জানিয়েছেন, প্রতিটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র তাদের অস্ত্রাগার বাড়াচ্ছে এবং সামরিক কৌশলেও পারমাণবিক অস্ত্রের ভূমিকাকে তীক্ষ্ণ করছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা।

বিশ্বে পারমাণবিক মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। রাশিয়ার কাছে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটির কাছে রয়েছে মোট ৫ হাজার ৯৭৭টি ওয়ারহেড, যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা পারমাণবিক ওয়ারহেডের থেকে ৫৫০টি বেশি।

সম্প্রতি রুশ পরমাণু বাহিনীর প্রায় ১ হাজার সেনা এক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ১০০টিরও বেশি সামরিক যান ও আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার ইয়ারসও সে মহড়ায় ব্যবহৃত হয়েছে।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই পরমাণু বাহিনীকে ‘বিশেষ’ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের এ বক্তব্য আসলে অন্য দেশগুলোর প্রতি সতর্কবার্তা। এর মানে যুদ্ধে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আকাঙ্ক্ষা নয়।

ইউক্রেন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধ কতটা বাস্তব?

ইউক্রেনে রুশ বাহিনী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে, এমন দাবি পশ্চিমাদের। এদিকে ইউক্রেনকে সহায়তায় ন্যাটোভুক্ত দেশ ট্যাংক, দীর্ঘপাল্লার রকেট সিস্টেমের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করছে।

যদিও সরাসরি ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ায়নি, এরপরও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না রাশিয়া। এমন অবস্থায় যে কৌশলগত পরমাণু বোমা ব্যবহারকে একসময় অসম্ভব ভাবা হতো, তার সম্ভাবনা এখন বাড়ছে।

১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আর কৌশলগত চিন্তার অংশ নয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে।

১৯৬২ সালে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন প্রায় ৫০ বছর পর এসে আবারও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পারমাণবিক সংঘাতের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে আসছে।

রাশিয়ার পারমাণবিক হামলায় পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া কী হবে?

রাশিয়া যদি ইউক্রেনে সীমিত পরিসরেও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে, তাতে পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? তা বলা মুশকিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া যদি পারমাণবিক, রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্রের হামলা চালায়, যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। এদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ওয়ারশোতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ওয়ারশো মেমোরেন্ডাম নামে পরিচিত।

যদিও সেই চুক্তি পশ্চিমারাই লঙ্ঘন করেছে ও পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ব্লকের অনেকেই এখন ন্যাটো সদস্য। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে প্রাথমিক বিরোধও ন্যাটোর সদস্য হওয়া নিয়েই।

এখন প্রশ্ন হলো ইউক্রেনকে পরাজিত করতে পুতিন কী পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসবেন?

পাঠকের মতামত: