কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের পোশাকের দাম

এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে শীতের তীব্রতা ব্যাপক বেড়েছে। ফলে শীতের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষায় প্রয়োজন পোশাকের। এ জন্য চাহিদাও বেড়েছে এই পোশাকের। কিন্তু চাহিদা যতই বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের পোশাকের দামও। শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাত— সবখানে বেড়েছে প্রয়োজনীয় পোশাকটির।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ-সংলগ্ন ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দোকানগুলোয় শীতের পোশাক কেনার জন্য ভিড় জমেছে। কাছে যেতেই দেখা যায়, দর-কষাকষি করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কেউ নিচ্ছেন, কেউ ফিরে যাচ্ছেন।

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের পোশাকের দাম

লক্ষ্মীবাজারে ফুটপাত থেকে ছেলেমেয়ের জন্য শীতের পোশাক কিনতে আসেন রাবেয়া বেগম। জানতে চাইলে বলেন, ‌‌‌‘শীতের শুরুতে একবার শীতের পোশাক দেখে এসেছিলাম। তখন বাচ্চাদের একটা সোয়েটারের দাম ছিল ৩০০ টাকা। ভেবেছিলাম কদিন গেলে দাম আরও কমবে। কিন্তু আজ এসে দেখি সেই সোয়েটারের দাম আরও ১০০ টাকা বাড়িয়েছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানদাররা পাল্লা দিয়ে শীতের পোশাকের দামও বাড়িয়েছে। আমাদের মতো মানুষের একটা নতুন জিনিস কিনতে তিনবার ভাবতে হয়। উপায় না দেখে অন্য একটা দোকান থেকে কম দামি একটা সোয়েটার কিনে দিয়েছি ছেলেকে। দাম কমলে অন্য আরেক দিন এসে মেয়েটার জন্য নেবো।

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের পোশাকের দাম

রেখা বেগম নামেও একজন আসেন শীতের পোশাক কিনতে। তিনি বলেন, ‌‌‘বাচ্চাদের শীতের জামা-পাজামাগুলোর দাম এক-দেড় শ টাকা ছিল, সেগুলো এখন দুই-আড়াই শ টাকা করে বিক্রি করছে। আসলে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের পোশাকের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। তাই দাম কম হোক আর বেশি হোক, বাধ্য হয়ে কেনা লাগছে। সব দোকানেই কম-বেশি সবাই দাম বাড়িয়েছে। বেচাবিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সিঙ্গেল কম্বলে আগের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি ধরে বিক্রি করছে। দাম কমানোর কথা বললে দোকানদাররা বলে তাদের নাকি কেনা বেশি পড়ছে। এ জন্য দাম কমানো কোনোভাবেই সম্ভব না। এ জন্য কেউ কিছু না বলে সবাই সবার মতো করে কেনাকাটা করছে।’

গ্রেট ওয়াল শপিংমলে ছেলেমেয়ের জন্য শীতের পোশাক কিনতে আসা শরিফা নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘শপিংমলের লোকাল ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তার চেয়ে ব্র্যান্ডের পণ্য ভালো। শুরুতে যেই দাম, এখনও একই দাম। কিন্তু তা-ও আমাদের সাধ্যের বাইরে।’

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের পোশাকের দাম
তিনি আরও বলেন, ‘দোকানদাররা কিছু পণ্যে মূল্য লাগিয়ে রেখেছে। শীত বেশি পড়ার কারণে এখন দামও বেড়ে গেছে। নাগালের বাইরে দাম চলে যাওয়া সত্ত্বেও বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে একটু দামি পোশাক কিনতে হচ্ছে। বছরে একবারই তো শীতের পোশাক কেনা হয়, এ জন্য সবাই ওত দামের কথা চিন্তা না করে সন্তানের খুশির জন্য কেনাকাটা করছে।’

দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে ফুটপাতে শীতের পোশাক বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, ‘চাহিদা বাড়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। আমরা তো খুচরা বিক্রেতা। কেনার ওপর বিক্রি নির্ভর করে। কম দামে কিনতে পারলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি। বেশি দামে কিনে তো আমরা লস দিয়ে বিক্রি করতে পারি না। তাই দাম না বাড়িয়ে আমাদের উপায় নেই। প্রতি লটে আগের চেয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। আগে যে কাপড় গড়ে ১০০ টাকা করে কেনা পড়তো, সেটা এখন ১৩০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। আমরা নিরুপায়।’

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের পোশাকের দাম
মনোয়ার নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের তো আর দোকান ভাড়া দেওয়া লাগে না। লাইনম্যান আর পুলিশরে এদিক-সেদিক যা দিয়ে সারা যায়, সবকিছু মিলিয়ে আমরা পোশাক বিক্রি করি। আমাদের এখানকার একই পোশাক দোকানে গেলে আপনি আরও বেশি দামে কিনতে হবে। আমরা সব সময় সীমিত লাভে বিক্রি করি। কারণ, এখানে যারা আসে তারা অনেকেই রেগুলার কাস্টমার।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা প্রোডাক্টে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ করি না। আমরা যেই সোয়েটার ২০০ টাকা বিক্রি করি, সেটা দোকানে গেলে ৩০০ টাকার কমে কিনতে পারবেন না। সে হিসাবে আমরা বেশি বিক্রি করি না।’

পাঠকের মতামত: