কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: এ বছরই বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষের আশা

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক জঘন্য ও ঘৃণ্যতম অধ্যায় হলো ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাকাণ্ড। ওই দিন তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর), বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে বিপথগামী কিছু সদস্য ধ্বংসলীলা চালায়। এতে প্রাণ হারান ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। তবে ১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার ।

রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, এ বছরই মামলাটির বিচার শেষ হবে। আসামিপক্ষ বলছে, হত্যা মামলায় অনেক আসামি খালাস পেয়েও বিস্ফোরক মামলার কারণে জেলে আছেন। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তারা মুক্তি পাবেন।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ম আদালতের রায় এবং ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হয়। এ ঘটনার বিস্ফোরক আইনে করা মামলা এখনো বিচারাধীন।

রাজধানীর বকশিবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ২৫৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামীকাল রোববার ও সোমবার মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।

মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টে পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছিল। মাঝে দুই বছর করোনার কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ একটু বিলম্বিত হয়। এখন আবার আদালতের কার্যক্রম চলছে। সাক্ষীও আসছে। ২৫৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আশা করছি, এ বছর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে আদালত রায় ঘোষণা করতে পারবেন ।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, আমরা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার চাই। দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। মামলাটিতে যেন দ্রুত রায় ঘোষণা করেন আদালত সেটাই আমাদের কাম্য। কোনো আসামির এই মামলায় জামিন হচ্ছে না। আসামিদের পক্ষে কয়েকদফায় নিম্ম ও উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন চাওয়া হলেও তা নামঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে হত্যা মামলাটিতে ২৭৭ জন খালাস পেয়েছে, আশা করি বিস্ফোরণ আইনের মামলাটিতেও তারা খালাস পাবে। ন্যায় বিচার পাবেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান বিদ্রোহ শুরু করে। এ সময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।
পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, লোগো ও পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এ বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর আইন।

বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।

২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় চার বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।

রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চার জনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজন মারা যান। খালাস পান ১২ আসামি।

পাঠকের মতামত: